গত বছর ইউরোপে বন্যা ও তাপপ্রবাহে ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

গত বছর ইউরোপজুড়ে যে ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, তাতে ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এমনটাই জানিয়েছে ইউরোপের জলবায়ু বিষয়ক এক প্রতিবেদনে। জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ইউরোপকে এর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর পার করতে হয়েছে।
২০২৪ সালে ইউরোপের নানা স্থানে দেখা গেছে ভয়াবহ দৃশ্য—ডুবে যাওয়া রাস্তায় গাদা করে রাখা গাড়ি, উত্তাল পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া সেতু। ইউরোপীয় জলবায়ু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবছর ইউরোপের ৩০% নদীতে উচ্চ মাত্রার বন্যা এবং ১২% নদীতে চরম বন্যা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দুটি ঘটনা ছিল— সেপ্টেম্বরে মধ্য ইউরোপে প্রবল বর্ষণ, এবং অক্টোবরে স্পেনের পূর্বাঞ্চলে বন্যা, যেখানে শুধুমাত্র এই দুই ঘটনায় ৩৩৫টি বন্যা-জনিত মৃত্যুর মধ্যে ২৫০ জনের বেশি মারা যায়।
আগের গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের দুর্যোগের ভয়াবহতা এবং ঘনঘনতা বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে, কারণ তাপমাত্রা বাড়লে মেঘ বেশি পানি ধারণ করে এবং হঠাৎ করে মাটিতে ঢেলে দেয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) মহাপরিচালক সেলেস্টে সাওলো বলেন— “তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও তার প্রভাব মারাত্মক। শুধু দূষণ কমালে হবে না, আমাদের এখন গরম পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অগ্রসর হচ্ছি, কিন্তু আমাদের আরও দ্রুত, এবং একসঙ্গে এগোতে হবে।”
তাপপ্রবাহ ও দাবানলে বিপর্যয়
মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এবং WMO একত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
২০২৪ সালে “মাঝারি, উচ্চ এবং চরম মাত্রার তাপপ্রবাহের দিন” সংখ্যা ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে জুলাই মাসে রেকর্ড দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ দেখা যায়—টানা ১৩ দিন ধরে পুরো অঞ্চল জুড়ে প্রখর তাপ বিরাজ করছিল।
এই অতিরিক্ত তাপ ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি করে, যাতে ৪২,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরে পর্তুগালে, ভয়াবহ দাবানলে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমি পুড়ে যায়—মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে। এটি ছিল ইউরোপের গত বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডগুলোর একটি।
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু গবেষক ফ্রিডেরিকে অটো, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, বলেন— “প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে, ইউরোপের মানুষ এখনই চরম আবহাওয়ার কষ্ট ভোগ করছে, যখন বৈশ্বিক উষ্ণতা মাত্র ১.৩°C বেড়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা যদি এখন কিছু না করি, তবে ২১০০ সালের মধ্যে ৩°C উষ্ণতা পর্যন্ত পৌঁছানোর পথে এগোচ্ছি। আর তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে।”
পশ্চিম বনাম পূর্ব ইউরোপ: জলবায়ুর বৈসাদৃশ্য
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইউরোপের পশ্চিম ও পূর্ব অংশে আবহাওয়ার ব্যাপক পার্থক্য ছিল।
পশ্চিম ইউরোপ ছিল ভেজা ও মেঘাচ্ছন্ন, পূর্ব ইউরোপ ছিল গরম ও রৌদ্রোজ্জ্বল।
যুক্তরাজ্যের থেমস নদী ও ফ্রান্সের লোয়ার নদী গত ৩৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ প্রবাহ রেকর্ড করেছে।