দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানল: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬, ধ্বংস হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং শত শত ভবন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাবানলটি উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান লি হান-কিয়ং জানিয়েছেন, চরম খরা ও প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
দাবানলটি উইসিয়ং কাউন্টি থেকে শুরু হয়ে দ্রুত বিস্তৃত হয়ে ৩৬ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা পুড়িয়ে ফেলেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন অগ্নিকাণ্ড। প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং ৩০০টিরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৯,০০০ জন কর্মী ও ১২০টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। তবে শক্তিশালী বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়া পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। আগুনের ভয়াবহতায় দেশটির অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
এই দাবানলের কারণে দুইটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট – হাহোই গ্রাম ও বিয়ংসান কনফুসিয়াস একাডেমি হুমকির মুখে পড়েছে। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা বিশেষ আগুন প্রতিরোধী রাসায়নিক ব্যবহার করে এগুলো রক্ষার চেষ্টা করছে।
প্রতিবছর দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলের ঘটনা ঘটে, তবে এবছর পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এবারের শীতকালে স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক বৃষ্টিপাত হয়েছে, ফলে মাটি শুকিয়ে গিয়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানলের মাত্রা ও ভয়াবহতা বাড়ছে। হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ইয়েহ সাং-উক বলেছেন, “বৃষ্টির অভাব ভূমিকে শুষ্ক করে তুলছে, যা দাবানলের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে।”
অগ্নিকাণ্ডের জন্য মানবসৃষ্ট কারণও দায়ী হতে পারে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে উঠে এসেছে, কয়েকটি দাবানল স্থানীয়রা আগাছা পরিষ্কারের জন্য আগুন জ্বালানো কিংবা ওয়েল্ডিংয়ের সময় স্ফুলিঙ্গ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে, গৌনসা বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় ২০টি ভবন পুড়ে গেছে, যার মধ্যে দুটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ছিল।
এই আগুন নেভাতে সামরিক বাহিনীও সহায়তা দিচ্ছে, এবং এভিয়েশন ফুয়েল সরবরাহ করা হয়েছে যেন হেলিকপ্টারগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আবহাওয়া অফিস কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখালেও, ৫ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত এই ভয়াবহ দাবানল নেভানোর জন্য যথেষ্ট হবে না বলে সতর্ক করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাবানল দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি সতর্কবার্তা, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এ ধরনের দুর্যোগ আরও ঘন ঘন ঘটাবে।