ইউক্রেনের ১০০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

"বল এখন রাশিয়ার কোর্টে," ইউক্রেন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার পর মন্তব্য করলেন রুবিও। ছবি: দ্য গার্ডিয়ানের ভিডিও থেকে
ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের একটি তাৎক্ষণিক ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এই সিদ্ধান্তের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেবেন। যদি রাশিয়া সম্মত হয়, তবে এটি হবে ২০২২ সালে শুরু হওয়া পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি।
কিন্তু ইউক্রেনের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাশিয়া কিয়েভে বিমান হামলা চালায়। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলাটি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।
উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনার ফলাফল
সৌদি আরবের জেদ্দাহ শহরে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা শেষে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন মার্কিন প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে প্রস্তুত, যা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বাড়ানো যেতে পারে। তবে এটি রাশিয়ার সম্মতির ওপর নির্ভর করছে।
এই ঘোষণার পরপরই ট্রাম্প বলেন, "এটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, ইউক্রেন রাজি হয়েছে, এখন আমরা রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।" মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ খুব শিগগিরই মস্কো সফর করবেন এবং পুতিনের কাছে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
তবে পুতিন এখনো এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এই সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, "এটি ইউক্রেনের শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।" তিনি রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি গ্রহণের আহ্বান জানান এবং এই বিষয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শনিবার একটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করবেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, এই আলোচনায় "অগ্রগতি হয়েছে", তবে ইউক্রেনের জন্য "শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা" থাকা জরুরি।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এই সিদ্ধান্তকে "শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছেন।
ইউক্রেনের প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "আমরা যুদ্ধ শেষ করতে চাই যাতে এটি আর কখনো ফিরে না আসে।"
তিনি বলেন, "ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে প্রস্তুত। এখন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব রাশিয়াকে এই চুক্তিতে রাজি করানো।"
এই আলোচনার মাধ্যমে পুতিনের সামনে দুটি বিকল্প রাখা হয়েছে—অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটানো।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মার্কিন সরকার এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা, রাডার সরবরাহ ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করেছিল। কিন্তু এখন এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর তারা এসব সাহায্য পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়াও, এক বিতর্কিত খনিজ সম্পদ চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ৫০% অংশীদারিত্ব পাবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ইউক্রেনের নিরাপত্তাকে আরও মজবুত করবে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধ পরিস্থিতি
যদিও কিছু রুশ মিডিয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে রাশিয়ার জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে ব্যাখ্যা করেছে, তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, "আমরা সর্বদা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেকে মনে করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এখন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে, কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়।"
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করেছে। তারা দাবি করেছে, গত সাত মাসে ইউক্রেন দখল করা ১০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা পুনর্দখল করেছে।
চলমান আলোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই আলোচনার সময় ইউক্রেন একটি প্রস্তাব রেখেছিল—যদি রাশিয়া সম্মত হয়, তবে অন্তত এক মাসের জন্য স্থল ও আকাশপথে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে।
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে বেরিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি মার্কো রুবিও বলেছেন, "শান্তির জন্য সবাইকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ইউক্রেনকেও, রাশিয়াকেও।"
বিশ্ববাসী এখন এই সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে—পুতিন কি যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করবেন, নাকি সংঘাত চলতে থাকবে?