চার মৃতদেহ হস্তান্তর করল হামাস, যুদ্ধবিরতির পথে অগ্রগতি

ছবি: রয়টার্স
হামাস চার ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ হস্তান্তর করেছে এবং ইসরায়েল কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। পাঁচ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি বিঘ্নিত হওয়ার পর, এটি পুনরায় স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।
বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া
বুধবার রাতের দিকে হামাস দক্ষিণ গাজায় রেড ক্রসের কাছে চার ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ হস্তান্তর করে, যা পরে কেরেম শালোম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। একই সময়ে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাস পৌঁছায়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানায়, ওফার কারাগারে আটক ৪৩ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বন্দি বিনিময়ের সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা উল্লাসের মধ্যে বাস থেকে নেমে আসেন। অনেকে সবুজ জ্যাকেট ও কেফিয়ে পরে ছিলেন এবং সমর্থকেরা তাদের কাঁধে তুলে নেন। প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মিসরে পাঠানো হয়েছে, যেখানে তারা অন্য দেশে স্থানান্তরের অপেক্ষায় থাকবেন।
ইসরায়েলি মরদেহ হস্তান্তর ও হামাসের শর্ত
হামাসের পক্ষ থেকে হস্তান্তরিত মরদেহগুলোর মধ্যে ছিলেন—শ্লোমো মানৎসুর, সাচি ইদান, ওহাদ ইয়াহালোমি ও ইৎজাক এলগারাত।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, মরদেহগুলোর আনুষ্ঠানিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। ইদান পরিবারের সদস্যরা জানান, ৭ অক্টোবর হামাস তাকে জীবিত অপহরণ করেছিল, এবং গত নভেম্বরে তিনি জীবিত ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার শর্তেই অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি সম্ভব হবে। তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বের চুক্তি মেনে চলেছে এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
ইসরায়েলের আপত্তি ও সমালোচনা
শনিবার হামাস ছয়জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিলেও ইসরায়েল নির্ধারিত ৬০২ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। নেতানিয়াহুর সরকার দাবি করে, হামাস বন্দি হস্তান্তরের সময় প্রচারণামূলক প্রদর্শনী করেছিল, যা তারা মেনে নিতে পারেনি।
শেষ পর্যন্ত হামাস ক্যামেরার বাইরে মরদেহ হস্তান্তর করতে রাজি হয়, এবং ইসরায়েল বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া আবার শুরু করে। তবে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ফিলিস্তিনি বন্দিদের একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক বুধবার অভিযোগ করেন যে, ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, "গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, হাসপাতাল ও স্কুলের ওপর হামলা মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।" তিনি আরও বলেন, "হামাসও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, কারণ তারা ইসরায়েলের ওপর নির্বিচারে রকেট হামলা চালিয়েছে।"
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
বুধবার ইসরায়েলে এক শোক দিবস পালিত হয়, যেখানে হাজারো মানুষ পতাকা হাতে নিয়ে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন। হামাস গত সপ্তাহে বিবাস পরিবারের মরদেহ হস্তান্তর করেছিল, যাদের হত্যার জন্য ইসরায়েল হামাসকেই দায়ী করেছে।
এই বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রথম ছয় সপ্তাহের পর্ব সম্পন্ন হলো। দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার এবং সব ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির আলোচনা হওয়ার কথা। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি।
সাময়িক যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব উঠলেও, তা বাস্তবায়ন হবে কিনা বা আরও বন্দি বিনিময় হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান