জার্মানিতে নির্বাচনের প্রাথমিক ফল প্রকাশ, সরকার গঠনে জটিলতা

জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনে ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বুথ ফেরত সমীক্ষার মতোই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে সিডিইউ ও সিএসইউ জোট, যাদের প্রাপ্ত ভোট ২৮.৫%। তবে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের দল এসপিডি বিপুল পরিমাণ ভোট হারিয়ে পেয়েছে মাত্র ১৬.৪%। এর ফলে দলটি প্রায় ৯% ভোট কমেছে। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ডানপন্থি দল এএফডি, যারা ২০.৮% ভোট পেয়েছে।
কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে সিডিইউ আগেই জানিয়েছে, তারা এএফডির সঙ্গে জোট গড়বে না, ফলে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েও সরকার গঠনের দৌড়ে নেই এএফডি। এ অবস্থায় নতুন সরকার গঠনের জন্য দুটি সম্ভাব্য জোট হতে পারে—সিডিইউ ও এসপিডি একসঙ্গে সরকার গঠন করতে পারে, অথবা সিডিইউ গ্রিন পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গড়তে পারে। তবে সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, সরকার গঠনের জন্য দীর্ঘ আলোচনা হবে।
অন্যদিকে, এএফডি দাবি করেছে যে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর তৈরি করা ‘ফায়ার ওয়াল’ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। দলটি বলেছে, ভোটাররা মূলধারার দলগুলোর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং পার্লামেন্টে তারা শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। তবে সংরক্ষণশীল ও গণতান্ত্রিক দলগুলো আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা এএফডির সঙ্গে কোনোভাবেই জোট বাঁধবে না।
নতুন সরকার গঠনের প্রশ্নের পাশাপাশি চ্যান্সেলর পদের জন্যও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস। তিনি ইতোমধ্যে ইউরোপকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনে তার বিজয়ের পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। মাক্রোঁ বলেছেন, শক্তিশালী ও সার্বভৌম ইউরোপীয় ব্লক গঠনে তিনি ম্যার্ৎসের সঙ্গে কাজ করতে চান।
নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও। তিনি বলেছেন, জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বরাবরের মতোই দৃঢ় সম্পর্ক ছিল এবং নতুন সরকারের অধীনে এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রধানদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও নানা চমক দেখা গেছে। সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ৪৭.৭% ভোট পেয়ে নিজের কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এএফডি প্রার্থী ডার্ক ওয়াইজ ২১.৪% ভোট পেয়েছেন। চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামান্য ব্যবধানে জয় পেয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ২১.৮%। এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গ্রিন পার্টির নেত্রী আনালেনা বেয়ারবক, তবে তিনি পরাজিত হয়েছেন।
এছাড়া, গ্রিন পার্টির সহ-নেতা ও উপ-চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেকও পরাজিত হয়েছেন। তাকে হারিয়েছেন সিডিইউ প্রার্থী পেট্রা নিকোলাইজেন।
জার্মানির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হলেও কোন দল জোট বাঁধবে এবং চূড়ান্তভাবে কে চ্যান্সেলর হবেন, তা জানতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।