Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-পুতিন আলোচনা: ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৭ এএম

ট্রাম্প-পুতিন আলোচনা: ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি সম্ভাবনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি এবং ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, কিয়েভ তার সমস্ত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে না এবং ন্যাটোতে যোগদানও সম্ভব নয়, যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে হয়।

ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ না থাকার বিষয়ে চিন্তিত নন। আর কিয়েভ আলোচনার মাধ্যমে খুব বেশি ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। তিনি জানান, রাশিয়া অনেক ভূমি দখল করেছে, সেই ভূমির জন্য তারা লড়েছে এবং বহু সেনা হারিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তিনি নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ড নিয়ে চিন্তিত নন, বরং শান্তি প্রতিষ্ঠাই তার মূল লক্ষ্য। "আমি চাই মানুষ মারা না যাক," তিনি বলেন।

ইউরোপের শঙ্কা

রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত আলোচনা শুরু ও ইউক্রেনকে ভূমি ছাড়ার আহ্বান কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত চুক্তি করতে চাইলে পুতিনের শর্ত মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমে জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে "দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ" ফোনালাপ করেছেন এবং উভয় পক্ষ তাদের দলকে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তিনি ও পুতিন একে অপরের দেশ পরিদর্শনের পরিকল্পনা করেছেন। তাদের প্রথম বৈঠক হবে সৌদি আরবে।

ক্রেমলিনও এই ফোনালাপ নিশ্চিত করেছে এবং বলেছে, পুতিন শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে চান।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রকাশ্যে আলোচনাকে সমর্থন করেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি ও ট্রাম্প "অর্থবহ" একটি ফোনালাপ করেছেন। তিনি বলেন, "কেউই ইউক্রেনের চেয়ে বেশি শান্তি চায় না। আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছি।"

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: ন্যাটো নয়, বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ব্রাসেলসে বলেছেন, "ইউক্রেনের ২০১৪ সালের সীমান্ত পুনরুদ্ধার করা অবাস্তব।" তার মানে ক্রিমিয়া ও ডনবাস অঞ্চলের রুশ নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নেওয়ার হচ্ছে বলে ইঙ্গিত।

তিনি স্পষ্ট করেন যে, ইউক্রেনকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য "শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা" পেতে হবে, তবে তা ন্যাটোর সদস্যপদ নয়। বরং, ইউরোপীয় এবং অন্য দেশগুলোর সেনারা এই দায়িত্ব নেবে। মার্কিন বাহিনী এতে অংশ নেবে না।

রাশিয়ার শর্ত ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান ও নিরস্ত্রীকরণ দাবি করেছে, যে দাবি ২০২১ সালের আগ্রাসনের আগেও তারা তুলেছিল। পুতিন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তও দিয়েছেন।

কিয়েভ অতীতে এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং বাইডেন প্রশাসন বলেছে, ইউক্রেনের ওপরই নির্ভর করবে তারা কখন শান্তি আলোচনায় যাবে।

জেলেনস্কি বলেছেন, "আমেরিকা ছাড়া নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বাস্তবসম্মত নয়," এবং যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনে ১-১.৫ লাখ সেনার একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রয়োজন হতে পারে, যদিও তা ৬ লক্ষাধিক রুশ সেনার তুলনায় অনেক কম।

একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, "আমরা এখন এত বড় বাহিনী মোতায়েন করতে পারবো না, কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্যও করতে পারবো না। তাই আমাদের বাস্তবতা মেনে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।"

আরেক কূটনীতিক হেগসেথের অবস্থানকে "আগাম আত্মসমর্পণ" বলে অভিহিত করেন এবং প্রশ্ন তোলেন, "যদি ইউক্রেন এতটাই ছাড় দিতে বাধ্য হয়, তাহলে আলোচনায় কী অবশিষ্ট থাকবে?"

ইউরোপের অংশগ্রহণ দাবি

ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্যারিসে এক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, আসন্ন মস্কো-ওয়াশিংটন আলোচনায় ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেন, "ইউরোপীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া ইউক্রেনে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।"

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও বলেন, "রাশিয়া যদি কালই সেনা প্রত্যাহার করে, তবে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য ইউক্রেনকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখা।"

যুদ্ধবন্দি বিনিময় ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল

ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক দিন আগেই মার্কিন শিক্ষক মার্ক ফোগেল ও রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার ভিনিকের বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে।

এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, যিনি এখন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আলোচক দলে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, সিআইএ পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ ও উইটকফ।

তবে, ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলোগ আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হননি, যা কূটনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প ও পুতিনের আলোচনার দ্রুত অগ্রগতি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনকে ভূমি ছাড়ার চাপ, রাশিয়ার শর্ত মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ইউরোপের নেতারা আলোচনায় তাদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে চাইলেও, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার চায়, যা তাদের সামরিক সহায়তার বিনিময়ে আলোচনার অংশ হতে পারে।

এই আলোচনার ফল কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত, তবে ইউক্রেনের জন্য এটি কঠিন সময় হতে চলেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন