Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

এ সপ্তাহে আরও জিম্মি মুক্ত না হলে ইসরায়েল গাজায় ফের যুদ্ধ শুরু করবে: নেতানিয়াহু

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ এএম

এ সপ্তাহে আরও জিম্মি মুক্ত না হলে ইসরায়েল গাজায় ফের যুদ্ধ শুরু করবে: নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে আরও জিম্মি মুক্ত না করে, তাহলে ইসরায়েল গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু করবে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক হুমকিকে সমর্থন করেছেন, যা উভয় পক্ষের মধ্যে তিন সপ্তাহ ধরে চলা অস্ত্রবিরতির অবসান ঘটাতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, তিনি গাজা নিয়ে নেবেনে। এই হুমকিকে সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহু। আর এতেই জটিলতা।

তবে এখনও স্পষ্ট নয় যে নেতানিয়াহু গাজায় আটক থাকা ৭৬ জন বন্দির সবাইকে মুক্তির দাবি করছেন, নাকি শুধু শনিবার মুক্তি পাওয়ার কথা থাকা তিনজনের ব্যাপারে বলছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।

নেতানিয়াহুর এই চূড়ান্ত হুমকি মঙ্গলবার তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় এসেছে। তিনি বলেন, “যদি হামাস শনিবার দুপুরের মধ্যে আমাদের জিম্মিদের ফেরত না দেয় তাহলে অস্ত্রবিরতি শেষ হবে এবং আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) তীব্র লড়াইয়ে ফিরে যাবে যতক্ষণ না হামাস সম্পূর্ণ পরাজিত হয়।”

এই বক্তব্যের একদিন আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “যদি শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে গাজার সব জিম্মি ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে আমি বলব অস্ত্রবিরতি বাতিল করা হোক। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হোক।”

নেতানিয়াহুর এই হুমকি আসে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহকে আতিথ্য দেন। এই বৈঠক ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, যেখানে তারা অস্ত্রবিরতি ও গাজা “নিয়ে নেওয়া” এবং অঞ্চলটির ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জর্ডান ও মিশরের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর জন্য অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিতে পারেন, যদি তারা তার পরিকল্পনার সঙ্গে একমত না হয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে ট্রাম্প কার্যত অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার পক্ষে মত দেন এবং বলেন, “গাজা কেনার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ আমরা এটি নিয়ে নিচ্ছি।”

অস্ত্রবিরতির ভবিষ্যৎ বর্তমানে অনিশ্চিত। ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে প্রায় ৪৮,০০০ ফিলিস্তিনি এবং ১,৭০০-এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে যাওয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহুর সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কট্টরপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ হুমকি দিয়েছেন যে, যুদ্ধ পুনরায় শুরু না হলে তিনি নেতানিয়াহুর জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন, যা প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকার ও অস্ত্রবিরতির মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করতে পারে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, যদি শনিবার পরিকল্পিত তিন বন্দি মুক্তি পায়, তবে ইসরায়েল অস্ত্রবিরতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুত থাকবে।

তবে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হতে পারে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। মঙ্গলবার রাতে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি গাজার আশেপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, “হামাস অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিচ্ছে না—এজন্য আমি আইডিএফ-কে গাজা সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছি। এই অপারেশন এখনই বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে।”

সোমবার হামাস ঘোষণা করেছিল, তারা অস্ত্রবিরতি চুক্তির “লঙ্ঘনের” কারণে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখছে। এর ফলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার হামাস তাদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে ট্রাম্পের হুমকিকে উপহাস করে এবং কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। 

হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেন, “ট্রাম্পকে মনে রাখতে হবে যে, এখানে একটি চুক্তি রয়েছে, যা উভয় পক্ষের সম্মান করা উচিত। এটাই বন্দিদের মুক্তির একমাত্র উপায়। হুমকির ভাষার কোনো মূল্য নেই, এটি কেবল পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে।”

মঙ্গলবার রাতে হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইসরায়েলকে যেকোনো জটিলতার জন্য দায়ী বলে অভিহিত করে।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক করে, যা চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে।

স্মোট্রিচ, যিনি অস্ত্রবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যকে সমর্থন করে এক্সে (টুইটারে) লিখেছেন, “এখনই সবাই মুক্তি পাক।”

এর আগের দিন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা বিভাগের সব সৈন্যের ছুটি বাতিল করে, যা যুদ্ধ পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়েছে।

এদিকে তেল আবিবে সোমবার এবং মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবরোধ করে এবং সব বন্দিদের মুক্তির দাবি জানায়। কিছু বন্দির আত্মীয়রা সরকারের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প কার্যত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং বলেন, “আমি মনে করি এটি খুব ভালোভাবে কাজ করবে।” 

তিনি আরও বলেন, গাজাকে “নিয়ে নেওয়া হবে এবং এটিকে যত্নসহকারে রাখা হবে।”

ট্রাম্পের এই ঘোষণা ইসরায়েলি নেতাদের জন্যও বিস্ময়কর ছিল, কারণ পেন্টাগন বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা করেনি।

তবে এই পরিকল্পনা আরব দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে, যারা বলছে, এটি ট্রাম্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য (সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন) ধ্বংস করবে।

রাজা আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “গাজা পুনর্গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত না করা এবং মানবিক সংকট মোকাবিলা করা সবার জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”

তিনি আরও জানান, জর্ডান গাজা থেকে ২,০০০ অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করবে, তবে গাজার ওপর ইসরায়েলের দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তার দেশের অবস্থান স্পষ্ট রাখবেন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন