মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করবে।
তার বিবৃতির পর পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর তিরস্কার করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, পানামা খালের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অসহ্য। আমরা এটা ভুল হাতে পড়তে দেব না!
চীন পানামা খাল নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে হংকংভিত্তিক কর্পোরেশন সি কে হাচিসন হোল্ডিংস ১৯৯৭ সাল থেকে ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবেশপথে অবস্থিত খালের দুটি বন্দর পরিচালনা করেছে।
তবে পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো বলেছেন, পানামা খালের উপর চীনের প্রভাব নেই।
কী নিয়ে বিরোধ?
পানামা খাল প্রশান্ত মহাসাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে।
বছরে ১৪ হাজার জাহাজ খালটি অতিক্রম করে। এই জলপথ বিশ্বব্যাপী সমুদ্র বাণিজ্যের আনুমানিক আড়াই শতাংশ এবং সমস্ত মার্কিন জাহাজের ৪০ শতাংশ ব্যবহার করে।
এশিয়া থেকে পণ্য আমদানির জন্য খালটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কে এই খাল নির্মাণ করেন?
খালটি ১৯০৪ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। বেশির ভাগই মার্কিন সরকার নির্মাণ করে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট সেই নির্মাণ তদারক করেন।
এটার মালিক কে?
খালের মালিক পানামা সরকার।
পানামা মালিকানা পায় ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। মার্কিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার স্বাক্ষরিত ১৯৭৭ সালের চুক্তির অধীনে পানামাকে খালের মালিকানা হস্তান্তর করে।
ট্রাম্প বলেছেন, যদি দান করার এই নৈতিক ও আইনগত নীতি অনুসরণ করা না হয়, তাহলে আমরা দাবি করব যে, পানামা খাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সম্পূর্ণ, দ্রুত এবং প্রশ্ন ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
খাল কি শুকিয়ে যাচ্ছে?
২০২৩ সালে মধ্য আমেরিকার খরা পরিস্থিতি পানামা খালকে প্রভাবিত করেছিল।
খালটি সচল রাখার জন্য নিকটবর্তী মানবসৃষ্ট গাতুন হ্রদের উপর নির্ভর করে। খাল কর্তৃপক্ষ জলপথ ব্যবহার করে জাহাজের সংখ্যা সীমিত করে এবং ব্যবহারের ফি বাড়ায়।
গত অর্থবছর পানামা খালে জাহাজ চলাচল ২৯ শতাংশ কমেছে।
আগামী বছরের জন্য ফি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে মুলিনো বলেছেন, পানামা সরকার খালের যে উন্নতি করেছে তার জন্য এই বাড়তি ফি নেওয়া হয়।
গত নভেম্বর ভোটে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন। সে সময় তিনি ভোটের প্রচারাভিযানে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করেন। তিনি বলেন, পানামা খাল এমন একটি অঞ্চল যেখানে তিনি আমেরিকার স্বর্থ দেখতে পাচ্ছেন।
ট্রাম্প কানাডা দখলেরও হুমকি দিয়েছেন।
তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক কানাডিয়ান চান, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫১তম রাজ্যে পরিণত হোক। আমি মনে করি এটি একটি মহান ধারণা। ৫১তম রাজ্য!!!’
ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডার পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ট্রাম্প কানাডা দখলের হুমকি দিলেন। এর ফলে কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের জন্য চাপ আরও তীব্র হয়েছে।
ট্রাম্প ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের প্রতিও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সোমবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা করেছেন, তিনি কেন হাওরিকে ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের পরম প্রয়োজন।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের সময়ও এই পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু ডেনিশ কর্তৃপক্ষ এটি প্রত্যাখ্যান করেছিল। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ডেনিশ মিডিয়াকে বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।