বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা কলকাতার ব্যবসায়ীদের
আউটলুক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
বাংলাদেশিদের না পাওয়ায় ধস নেমেছে ভারতের পর্যটন ব্যবসায়। তাই ত্রিপুরার মতো বয়কট নয়, বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কলকাতার হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জার ও পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করব না, যতটা পারবো তাদের নিরাপত্তা দেব।
আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে কলকাতার নিউ মার্কেটের মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, নিউ মার্কেট ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, হোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তা 'আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করব না। তারা যেন নিশ্চিন্তে এখানে আসেন। যতটা পারবো তাদেরকে নিরাপত্তা দেব।
মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মনতোষ সাহা বলেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকদের যে ঢল ছিল, সেটা এখন নেই। যার কারণে আমরা সবাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তেমনিভাবে বাংলাদেশিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সবার আগে আমার দেশ। দুই দেশের সরকারকে নিজেদের মধ্যে বসে সুষ্ঠু সমাধান বের করার জন্য আহ্বান জানাই।
মনতোষ সাহা আরও জানান, ডিসেম্বর থেকে সিজন শুরু হয়। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতায় আসেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার বলেন, নিউমার্কেট মূলত বাংলাদেশভিত্তিক অঞ্চল। বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে এখানকার মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল, পর্যটক ব্যবসা চলছে। তাই তাদের অনুপস্থিতি আমাদের এখানে প্রভাব ফেলছে। যদিও বাংলাদেশিদের আমরা বিদেশি পর্যটক হিসেবে দেখি না। তারা আমাদের ঘরের সদস্য। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। আশা করি আগামী দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মনতোষ সরকার আরও বলেন, সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। সেদিকে কান না দিয়ে বাংলাদেশের পর্যটকদের জানাবো তারা এখানে আসুক। কারণ, দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশেই ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। আমাদের উভয়পক্ষকেই এই সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
কলকাতার এমআরএল হোটেলের মালিক মনতোষ সরকার জানান, আমার হোটেলের ৮০ শতাংশ পর্যটক বাংলাদেশি, বাকি ২০ শতাংশ ভারতীয় পর্যটক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় পর্যটনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ। ডিসেম্বরেও বাংলাদেশের পর্যটক আসছেন কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম। আমরা এটুকু বলতে চাই- বাংলাদেশিরা আসবেন, তাদের স্বাগত। তারা সেবা পান বলেই আমাদের এখানে আসেন। আমরাও আমাদের সাধ্যমতো তাদের পরিষেবা দেবো।
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, পরিবহন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলী হোসেইন শেখ জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে আমার ব্যবসা ডুবতে বসেছে।
ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল করার দাবি জানিয়ে আলী হোসেন জানান, বর্তমানে যে অবস্থা জারি রয়েছে, তাতে বাংলাদেশের চাহিদা মিটছে না। সেইসঙ্গে মাল্টিপল ভিসা, এমপ্লয়মেন্ট ভিসা চালু করার দাবি জানাই আমি। তিন মাসের জন্য এই ভিসা দেওয়া যেতে পারে। যদিও ভিসার বিষয়টি দুই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের কাছেও আবেদন জানাই।
বাংলাদেশি পর্যটকদের নির্ভয়ে কলকাতায় আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কলকাতা আসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।
সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ কামরুদ্দিন মালিক জানান, এখানে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের পর্যটকদের মধ্যে একটা আশঙ্কা আছে যে, কলকাতায় গেলে কী হবে? আমি বলব, আপনারা নিশ্চিন্তে আসুন। ব্যবসা আজকে নেই, কালকে আবার ফিরে আসবে। কিন্তু মানুষের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলে সেটা ফিরে আসা কঠিন। কারো মনে যেন কোনও আতঙ্ক না থাকে। বাংলাদেশিদের জন্য কলকাতায় হোটেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে একটা গুজব রটেছে- এতে কান দেওয়া উচিত নয়।
গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিক সঞ্জয় মজুমদার বলেন, কলকাতা নিউমার্কেটে প্রচুর হোটেল, দোকান রয়েছে। এর ওপর বহু মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভর করে। কিন্তু বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় এখানে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বহু লোকের রুটি-রুজি কমে গেছে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এখানকার অর্থনীতিতে বড়সড় প্রভাব পড়বে।
সৌহার্দ্য বাসের মালিক অবনী ঘোষ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়কে দায়ী করে বলেন, কিছু কিছু খবরের কারণে দুপাড়েই প্রভাব পড়ছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রির আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়ে আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই শহরে দুদেশের যে জটিলতা সেটা খুলতে পারে। ভিসা প্রক্রিয়াতেও কিছুটা শীতলতা আসতে পারে।
বাংলাদেশি পর্যটকদের নিয়ে তিনি বলেন, অতিথি দেবো ভব অর্থাৎ অতিথি হলো দেবদুল্য। আমরা এটা মেনে চলেছি আগামী দিনেও মেনে চলবো। কোথায় কী বলছে তাতে কান দেওয়ার দরকার নেই। আমরা বাংলাদেশিদের বয়কট করব না। যতটা পারবো তাদের নিরাপত্তা দেব- সেটা সিসিটিভি দিয়ে হোক বা সার্বক্ষণিক নজরদারি দিয়েই হোক।