সিকিমে পাহাড়ধসে তিস্তা প্রকল্পের একাংশ ভেঙে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিকিমের বালুতারে এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বিপদের আশঙ্কা করে সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, সিকিমে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ধস নামছে। এ কারণে বন্ধ জাতীয় সড়ক। তারই মধ্যে বালুতারে গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি ধস নেমেছে। এখানেই তিস্তা নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে ৫১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎপ্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিন পাহাড়ের ওপর আচমকাই কম্পন হয়। এরপর হুড়মুড় করে গাছপালা-সহ পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। সেই ধস গিয়ে পড়ে বাঁধের উপর। সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের একটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। আর্তনাদ করতে করতে মানুষ পালাতে থাকেন।
সিকিমে তিস্তার ওপর একাধিক বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। এরপর পশ্চিমবঙ্গেও গাজলডোবায় তিস্তার ওপর বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এদিন বালুতরে যে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে, সেটি নির্মাণ করেছিল ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন। তিস্তার ওপর স্টেজ ফাইভ বাঁধ তৈরি করেছিল তারা। সেই বাঁধটি এদিন ভেঙে যায়।
এর আগে গত বছর মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছিল চুংথাংয়ে তৈরি আরেকটি বাঁধ। এখনো সেই বাঁধ পুরোপুরি ঠিক করা যায়নি। এদিন যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গও তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
পরিবেশবিদ অরূপ গুহ বলেছেন, এমন যে হবে সে আশঙ্কা ছিলই। পাহাড়ে এবং ডুয়ার্সে তিস্তার ওপর একের পর এক প্রকল্প তৈরি হয়েছে। নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে। পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। ডয়চে ভেলেকে একটি সাক্ষাৎকারে অরূপ আগেই জানিয়েছিলেন, তিস্তার ওপর তৈরি বাঁধগুলির মেয়াদকাল পূর্ণ হতে চলেছে। অথচ সম্পূর্ণ প্রকল্পই এখনো রূপায়ন হয়নি। ফলে যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। এদিনের বিপর্যয় তারই এক ইঙ্গিত।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ এদিনের ঘটনার ফলে গাজলডোবায় চাপ পড়তে পারে বলে মনে করছেন। কারণ সিকিমে প্রবল বৃষ্টিও হচ্ছে। তিস্তায় পানি অনেক। গাজলডোবা পানি ছাড়লে তার নিচের অংশে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে