সংসদ যাত্রায় ঘৃণা ছড়িয়েছেন ব্রিটিশ এমপি শওকত আদম? তদন্তে পুলিশ
জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন শওকত আদম
গত ৫ জুলাই, যুক্তরাজ্যে সংসদ নির্বাচনের পরদিন, দক্ষিণ লিসেস্টারের রাজনৈতিক দৃশ্যপট কেঁপে উঠেছিল, যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আদমকে নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করেছিল।
এদিন দুটি ঘটনা ঘটে। একটি হল এই আসনে লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী জনাথন অ্যাশওয়ার্থ পরাজিত হন। আরেকটি হল একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যিনি আবার কিনা মুসলমান, যার নাম শওকত আদম, তিনি এই আসনে বিজয়ী হন।
এ ঘটনায় শুধু লেবার পার্টি নয়, গোটা যুক্তরাজ্যে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। পশ্চিমা সব গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হয়েছিল।
নির্বাচন নিয়ে দেশজুড়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রার্থী ও ভোটার—উভয় শ্রেণিকে ভয় দেখানো হয়েছিল।
আর ফল ঘোষণার সাথে সাথে লেবার-সমর্থকরা দাবি করলেন, নির্বাচনী প্রচারে এখানে আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা তার তদন্ত চান তারা।
একটি বিশদ তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহ করা হচ্ছে, শওকত আদমের উগ্রবাদী ভাই একটি পক্ষপাতমূলক ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছেন।
অ্যাশওয়ার্থের দাবি, নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপকভাবে বিতরণ করা লিফলেটে অ্যাশওয়ার্থকে গাজায় গণহত্যার সমর্থক হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল।
অ্যাশওয়ার্থের ছবি কাঁদতে থাকা শিশু ও ধ্বংসস্তূপের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে লেবার-সমর্থকদের অভিযোগ।
অ্যাশওয়ার্থ দ্য সানডে টাইমসকে বলেছেন, “আমি আমার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নির্বাচনী প্রচারে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ব্যক্তি আমাকে বলেছিলেন, ‘সবাই তোমাকে ঘৃণা করে’।” অ্যাশওয়ার্থের দাবি, তাকে হেয়প্রতিপন্ন করারা জন্যই এমন কথা তার শিশুমেয়ের সামনে বলা হয়েছে।
আরেকজন লেবার-প্রার্থী (নিরাপত্তা-উদ্বেগের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) পলিটিকোকে বলেছেন, প্রচারণার সময় তারা তাদের সন্তানদের নির্বাচনী এলাকায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ তারা ভীতির শিকার হয়েছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আদমকে ইঙ্গিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একা কোথাও ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের একজন প্রচারকর্মী বলেছিলেন, আমাদের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (শওকত আদম) সমর্থকরা একটি ভ্যানে করে অনুসরণ করেছিলেন যখন আমরা নির্বাচনী এলাকায় দরজায় দরজায় কড়া নাড়ছিলাম।’
শওকত আদম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন ২০১৮ সালে যখন তিনি মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের লিসেস্টার শাখার সভাপতি হন। এই সংগঠনের বিরুদ্ধে মৌলবাদের অভিযোগ রয়েছে। শওকত চরমপন্থী সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন। রাজনৈতিক যাত্রায় শওকত ২০১৯ সালে ক্লডিয়া ওয়েবের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি পরে হয়রানির অভিযোগে লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কারের মুখোমুখি হন। আর ২০২০ সালে লেবারপ্রধান জেরেমি কর্বিনকে বহিষ্কার করা হলে আদম মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।
এরপর গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরু হয় যা এখনও চলছে যা গত ৪ জুলাই ব্রিটিশ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ৭ অক্টোবরের সেই ঘটনা শওকতকে রাজনীতিতে সক্রিয় করে থাকবে। কিন্তু লেবার পার্টির প্রতি তার আর ভক্তি নেই। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।
শওকত বলেন, লেবার পার্টি গাজায় ইসরায়েলি হামলার অবসান চায় না এবং গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ সমর্থন করে। শওকত তার কথা লিফলেটে প্রচার করেন এবং তার উগ্রপন্থী ভাই একটি ওয়েবসাইটে শওকতের পক্ষে প্রচার চালান।
লিসেস্টারে ফিলিস্তিনের পক্ষে মার্চে আদম তার বক্তব্যে নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সমালোচনা করেন এবং প্রথাগত রাজনৈতিক দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার নির্বাচনী প্রচারণা ‘ইউ ইলেক্ট’-এর সমর্থন পায়। ইউ ইলেক্ট একটি অলাভজনক সংস্থা যারা ভোটার-নিবন্ধনে উৎসাহিত করে। তারা আদমকে তাদের ‘শীর্ষ-মূল্যায়িত প্রার্থী’ হিসেবে সমর্থন করে, যাকে পক্ষপাতমূলক সমর্থন দাবি করে এর বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেবার-সমর্থকরা।
লেবার-সমর্থকরা আরো অভিযোগ করেন, তাদের প্রতিপক্ষ (শওকতকে ইঙ্গত করা হচ্ছে) উসকানিমূলক বার্তা দিয়ে লিফলেট বিতরণ এবং ভোটারদের ভয় দেখানোর কৌশল ব্যবহার করেছিল। অ্যাশওয়ার্থ নিজেই ভীতি প্রদর্শন ও সংঘর্ষের কথা তুলে ধরেছেন। অ্যাশওয়ার্থ অভিযোগ করেন, স্থানীয় আন্দোলনকারী মজিদ ফ্রিম্যান তাকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে অনুসরণ করেছেন। মজিদ ফ্রিম্যানকে এর আগে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ পুলিশ বলছে, শওকতের প্রচারাভিযানের কৌশলের বৈধতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন-১৯৮৩-তে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোপ্রার্থীরা স্পষ্টভাবে বলবেন, তাদের জন্য কে বা কারা অর্থ প্রদান করেছে। দক্ষিণ লিসেস্টারে বিতরণ করা অনেক লিফলেটে এসব প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়নি, যার ফলে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা পুলিশকে তদন্ত করতে হবে।
নতুন এমপি হিসেবে শওকত আদম এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছেন, গাজা সম্পর্কে তার অবস্থানের কারণেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন।