Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আসামে রেলের জায়গার মুসলিমদের ঘর ভাঙা হলেও অক্ষত হিন্দুদের

Icon

আউটলুক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম

আসামে রেলের জায়গার মুসলিমদের ঘর ভাঙা হলেও অক্ষত হিন্দুদের

শিলভাঙ্গাতে রেলের জায়গায় অক্ষত হিন্দুদের মন্দির।

ভারতের আসামের শিলভাঙ্গাতে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় চার দশক ধরে বসবাস করছে দেড় হাজারের বেশি পরিবার। সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের পর গত ১২ জুন হঠাৎ সেখানকার মুসলিম পরিবারগুলোকে উত্তর পূর্ব রেলের কর্মকর্তারা উচ্ছেদের নোটিশ পাঠান। তাদের সাত দিনের মধ্যে জমি খালি করতে বলে। তবে সেখানকার হিন্দু বাসিন্দাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।

এরপর ২৪ জুন মরিগাঁও জেলা প্রশাসক দেবাশীষ শর্মা জেলা পুলিশের প্রধানসহ প্রশাসনের লোকজন নিয়ে শিলভাঙ্গায় অভিযানে যান। অভিযানে সেখানকার সব মুসলিম পরিবারকে তারা উচ্ছেদ করা হয়। তবে হিন্দু পরিবারের ঘরগুলো সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়নি।

এদিকে আদালত উচ্ছেদ অভিযানে স্থগিতাদেশ দিলেও সেটি মানা হয়। প্রশাসন বলছে, সেখানকার মুসলিমদের ঘরগুলো ভাঙার পর তারা এই স্থগিতাদেশ পেয়েছে। এ জন্য সেখানকার হিন্দুসহ অন্য সম্প্রদায়ের ঘরগুলো ভাঙা হয়নি।

এই উচ্চেদ অভিযানের ফলে সেখানকার ৮ হাজার মুসলিম গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, পাবলিক প্রিমিসেস (অননুমোদিত দখলদারদের উচ্ছেদ) আইন, ১৯৭১ অনুসারে এলাকার সমস্ত বাসিন্দাকে রেলের জমি খালি করতে বলা হয়। কারণ তারা সেখানে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

তবে সেখানকার কংগ্রেসের সংসদ সদস্য প্রদ্যুত বোর্দোলোই অভিযোগ করে বলেন, সেখানকার মুসলিমরা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেয়নি। এ জন্য মুসলমানদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকার এই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাগীরোডের বিধায়ক পীযূষ হাজারিকাসহ একাধিক বিজেপি নেতা নির্দিষ্ট কিছু আসনে দলের ভরাডুবির জন্য মুসলিমদের দায়ী করেছেন।

এদিকে রাজ্যের বিজেপি প্রধান ভবেশ কলিতা বলেন,  প্রদ্যুত বোর্দোলোইয়ের অভিযোগ মিথ্যা। আমরা মনে করি দখলকারীদের উচ্ছেদ করা উচিত। এর সঙ্গে ভোটের কোনো সংযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, প্রদ্যুত বোর্দোলোইয়ের মতো নেতারা দখলকে উৎসাহিত করেন। তারা চান যে, এই জায়গাটি বাংলাদেশিদের জন্য একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে উঠুক। কিন্তু বিজেপি তা হতে দেবে না।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মামনি বেগম বলেন, আমরা তিন প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছি। আমার দাদা এখানে থাকতেন। আমার মায়ের জন্ম এই বাড়িতে। আমি এবং আমার ভাইয়েরা এখানে থাকতাম। কিন্তু এখন আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা বা জমি নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, মামনির বাড়ি থেকে কয়েকশ মিটার দূরে অন্যান্য ভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কয়েকটি ঘর, একটি স্কুল, একটি মন্দির এবং একটি আশ্রম। মুসলিমদের ঘরগুলো ভাঙা হলেও এগুলো উচ্চেদ করা হয়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘরগুলো হিন্দু পরিবারের। এসব ঘর, মন্দির ও আশ্রমও রেলের জমিতে। তবে হিন্দুদের হওয়ায় সেগুলো ভাঙা হয়নি। এছাড়া সেখানকার নেপালি এবং তিওয়া পরিবারের ঘরও ভাঙা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার শর্মা বলেন: আমরা নির্দিষ্ট অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের বাড়িগুলো ভেঙে ফেলতে পারিনি। কারণ আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই হাইকোর্টের আদেশ এসেছিল। এ কারণে আমাদের এটি বন্ধ করতে হয়েছিল।

এ বিষয়ে রিংকু রাই বলেন, আমাদের প্রতিবেশীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল, এ জন্য আমরা ভীত হয়ে পড়েছিলাম। তাই নিজেরাই বাড়িগুলো ভেঙে ফেলেছিলাম। তাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, আমি শুনেছি কিছু হিন্দু পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা পেয়েছে। তাই তারা জায়গা ছেড়েছে।

অঞ্জু বোরা বলেন, আমাদের পাশের মুসলিম পরিবারের ঘরগুলো ভাঙা হচ্ছিল। এ সময় আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে স্থানীয় নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল। তারা বলেছিলেন, আমাদের উচ্ছেদ করবে না। কারণ আমাদের নোটিশ দেওয়া হয়নি।

এদিকে ২১ জুন উচ্ছেদের নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শিলভাঙ্গার বেশ কয়েকজন। ২৪ জুন অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগে আদালতে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।

বিচারপতি সৌমিত্র সাইকিয়া উচ্ছেদ স্থগিত করেন। আদালত রেল এবং রাজ্য সরকারকে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান বন্ধ রাখতে বলে। তবে, সেখানকার একাধিক বাসিন্দা বলেন,  আদালতের স্থগিতাদেশের পরেও উচ্ছেদ অব্যাহত ছিল।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন