Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফুঁসছে ইউরোপ

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফুঁসছে ইউরোপ

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) তার অস্তিত্বের সবচেয়ে মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ৬০ বছরের ইতিহাস একটি নজিরবিহীন যুগ নিয়ে এসেছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির এই মহাদেশে প্রথমবারের মতো তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং ক্রমবর্ধমান অভিবাসীর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে ইসলাম-আতঙ্ক তো আছেই। সব আতঙ্কই ইউরোপের বাইরে থেকে এসেছে যা ইউরোপবাসীর মর্মবেদনারও কারণ। muse.jhu.edu-এর Project Muse-এর গবেষণায় এসব তথ্য মিলেছে।

২০১৫ সালে যখন এখানে অভিবাসন তরঙ্গ শুরু হয় তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, অভিবাসন তরঙ্গ একদিকে যেমন মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয় তেমনি, সেই সংখ্যা বাড়তে থাকায়, নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলার আতঙ্কে পড়ে অনেকে।

Project Muse-এর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সমসাময়িক ইউরোপীয় জনমত, জটিলতর মুসলিম সন্ত্রাসবাদের ইস্যু ঐতিহাসিক পটভূমিতে বহুদূর পৌঁছেছে। এটা এত বেশি জটিল যে, অভ্যন্তরীণভাবে এর সমাধান মিলবে না। কারণ ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনিদের ওপর পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বহুমাত্রিক। আবার নানাভাবে সেসব দেশ এবং পৃথিবীর আরো অনেক দেশ থেকে পালিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে যাদের তাড়াতে পারছে না মানবীয় দৃষ্টি গড়ে ওঠা ইউরোপ। রাষ্ট্র তা না পারলেও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। তাদের হাতে মানবীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে। মানবীয় সহানুভূতির বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের হাতে নারীর প্রতি অসম আচরণ ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে গোটা ইউরোপীয় সমাজে, যা তাদের পিছিয়ে দিচ্ছে সুশৃঙ্খল, মানবিক সমাজের লক্ষ্য থেকে।

কেন পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বহুমাত্রিক এবং তা থেকে তারা বের হতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের আভির্ভাবে পর থেকে এর সম্প্রসারণ বেড়েছে প্রতি মুহূর্তে। তা থামাতে ইউরোপকে দিতে হয়েছে বহুমূল্য। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৪১-৪৫) পর্যন্ত ইউরোপ সব সময় নিজেদের মধ্যে দেখেছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। সেখান থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তারা চিন্তা করেছে গোটা ইউরোপকে একসুরে বাঁধার উপায় নিয়ে। সে কাজে তাদের প্রাথমিকভাবে সময় লেগেছে প্রায় দুই যুগ। তারপর তারা পরিমার্জিত করে গড়ে তুলেছে নিজস্ব জীবন-সংস্কৃতি। সে জন্য তাদের আরো কয়েক যুগ কাজ করতে হয়েছে নিরলসভাবে। কিন্তু সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা এখনও অনেক দূরে। সফল হওয়ার জন্য তাদের দরকার বহির্বাণিজ্য। সেই বহির্বাণিজ্যের সঙ্গে বিরাটাংশে জড়িয়ে আছে মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলো, যাদের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপ এখন আর বিশ্বব্যাপারে আগের মতো সেই ক্ষমতা রাখে না। একসময় মার্কিন শক্তির উপর বিশ্ব আবদ্ধ ছিল যেখানে ইউরোপের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকাশ ঘটেছিল। সে সময় বহুপাক্ষিকতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, পরস্পর নির্ভরতা, গণতন্ত্রের বিকাশ, মুক্ত বাণিজ্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিচয়। সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন শুরু হয় ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের মধ্য দিয়ে। তেল-সমৃদ্ধ সুসংস্কৃতির দেশটি ধ্বংস হয়ে যায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ও ১০ লক্ষাধিক মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে স্থাপনা ধ্বংস তো ছিলই। পুরো দেশটাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সংকল্প করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। সেই থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে আরবীয় মুসমিদের দূরত্ব প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। এবং এর পরেও সময়-অসময় আসছে নতুন নতুন ইস্যু। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান, ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করে রাখা, প্রভৃতি নানা রকম ইস্যু পরিস্থিতিকে প্রতিনিয় জটিল করে তুলছে।

অধ্যাপক নাথালি টোকির ভাষায়, ‘ইউরোপ এই নতুন বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য এখন নিজেকে দেখার ও পরিচালনা করার পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।’ (দ্য গার্ডিয়ান) নাথালি টোকি ইতালির ইস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটসহ ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী যুগে আছি এবং বিশ্বের দিক পরিবর্তন হয়েছে। পুরনো সিস্টেমের কিছু বৈশিষ্ট্য এখনও আছে, কিন্তু জাতীয়তাবাদ, সুরক্ষাবাদ ও একতরফাবাদের মতো বিপরীত শক্তিগুলো বেড়েই চলেছে। 

ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতায় বলেছেন, ‘যদি এটা মানিয়ে না নেওয়া হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন টিকে থাকতে পারবে না।’ তার ভাষায়, ‘ইইউ মরণশীল!’ (atlanticcouncil.org) এই উপলব্ধি ইউরোপে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে বলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য।

অধ্যাপক নাথালি টোকি বা রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এখানে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ইইউর পররাষ্ট্রনীতির প্রতি ইঙ্গিত করছেন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন