Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় নৌবাহিনীর ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, সঙ্গে কারা?

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৮ এএম

ভারতীয় নৌবাহিনীর ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, সঙ্গে কারা?

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের অস্ত্র প্রতিযোগিতা বড় আকারে সামনে এসেছে। এর মধ্যে বেশি রকমের বেপরোয়া গতি দেখা যাচ্ছে সাবমেরিন নিয়ে। পাকিস্তানি নৌবহরের আধুনিকায়নে সহযোগিতা করছে চীন। অন্যান্য সহযোগিতা তো দিচ্ছেই। 

মাস দুই আগে চীন তাদের উচাং শিপইয়ার্ড থেকে হ্যাঙ্গর শ্রেণির সাবমেরিন চালু করে। সাবমেরিন-চুক্তি অনুযায়ী, চীন পাকিস্তানে চারটি ও চাইনিজ শিপইয়ার্ডে আরো চারটি সাবমেরিন নির্মাণ করবে। এগুলো পাকিস্তানের জন্য, যা তাদের নৌ-সক্ষমতা বাড়াবে নিঃসন্দেহে।

এর পরপরই দেখা গেল, ভারতীয় নৌবাহিনীকে আমেরিকা অত্যাধুনিক নৌ-টহলযান (ট্রাইটন) দিয়েছে। এই যান ভারতীয় নৌসেনার শক্তি যেমন বৃদ্ধি করেছে তেমনি সমুদ্রে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা-বন্ধুত্ব মজবুত করেছে। 

ট্রাইটন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, সমুদ্রে খনিজ ভাণ্ডারের খোঁজ, অন্যদের নৌযান ও সাবমেরিনের ওপর নজরদারি চালানো, সামুদ্রিক গবেষণার মতো বহুমুখী কাজ করবে। এই যান পানির ওপরে ও নিচে চলার জন্য ব্যবহার করছে সৌরশক্তি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই বাহনটি সমুদ্র প্রতিরক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনবে। কোন দিক থেকে এবং কতটা গভীর থেকে আওয়াজ আসছে, কোনো জাহাজ বা ডুবোজাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমা পার করে ভারতসীমায় ঢুকে পড়েছে কিনা তা চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ নৌবাহিনীকে সতর্ক করবে ট্রাইটন। এমনকি নিজের আত্মরক্ষার জন্যও এর শক্তিশালী ব্যবস্থা রয়েছে।

এর পরপরই রাশিয়া। মাত্র সপ্তাহ দুই আগে ভারতের সাথে লজিস্টিক চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে রাশিয়া। চুক্তিটি কয়েক বছর ধরে ঝুলে ছিল। চুক্তি অনুযায়ী সামরিক অনুশীলন, প্রশিক্ষণ, পোর্ট কল, দুর্যোগে ত্রাণ ও বিশেষ করে আর্কটিক সাগরে রাশিয়ান সামরিক সুবিধাগুলি সহজে নিতে পারবে ভারত। চুক্তিটি দুই দেশে সামরিক সুবিধা বিনিময় সহজ করবে। ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুরু করার পর ভারত বেশ কয়েকটি দেশের সাথে এমন চুক্তি করেছে। 

এছাড়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত-রাশিয়া। ভারতের গণমাধ্যমের খবর, ভারত ও রাশিয়া খুব শিগগিই একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এই চুক্তির হলে দুই দেশ পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা উপভোগ করবে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প৭৫১

ভারতীয় নৌবাহিনী ৪৩ হাজার কোটি রুপিতে (বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার কোটির বেশি) ‘প্রজেক্ট৭৫১ প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, যেখানে সাবমেরিন নির্মাণের জন্য মাঠপর্যায়ের মূল্যায়ন-পরীক্ষা তারা ইতোমধ্যেই সমাপ্ত করেছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, দেশটির নৌবাহিনীর একটি দল সম্প্রতি স্পেন সফর করে ‘নাভান্তিয়ার সাবমেরিন’ পর্যবেক্ষণ করেছে। এর আগে তারা জার্মানির ‘থাইসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস’ পরিদর্শন ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। উভয় সাবমেরিনেই উন্নত এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালশন সিস্টেম রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে পানির নিচে থেকে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। সফল নৌ-মিশনের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রজেক্ট৭৫১ উদ্যোগের লক্ষ্য ষষ্ঠ প্রজন্মের (six next-generation) সাবমেরিন নির্মাণ, যেখানে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ দেশি সামগ্রী ব্যবহার করা হবে। এই কৌশলগত প্রকল্পটি শুধু ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতাই বাড়াবে না, বরং দেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং প্রযুক্তি সংগ্রহ করাও সরকারের উদ্দেশ্য।

সম্প্রতি ভারত সফরের সময় নাভান্তিয়ার চেয়ারম্যান প্রযুক্তি স্থানান্তর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বছরের শেষের দিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ও স্প্যানিশ রাষ্ট্রপতি পেদ্রো সানচেজের ভারত সফরের সময় সাবমেরিন চুক্তি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশা করছে ভারত সরকার। এই দুই ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানের ভারত সফরের লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা।

বিশ্ব যখন ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, ইউক্রেন-রাশিয়া নিয়ে বহুদেশ যখন মন্দা-সংকটে জেরবার, ঠিক সেই সময় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ভারতের স্বনির্ভরতার আকাঙ্ক্ষাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে স্পেন ও জার্মানি।

জার্মানি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজারে কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে নিজের উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে যতটা না, তার চেয়ে বেশি রাশিয়ান অস্ত্রের উপর ভারতের উচ্চ-নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে। এর আগে ভারতে অস্ত্র রপ্তানি করত না জার্মানি। ইসরায়েলেও অস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল দেশটির। গত বছর হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি শুরু করে। একইভাবে ভারতের উপর থেকেও অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং উন্নত সাবমেরিন চুক্তির দিকে নজর দেয়।

কেন জার্মানির এই উদ্যোগ?

সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে এটি স্পষ্ট যে, জার্মানি তার দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের উপর থেকে ছোট অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জার্মানির পদক্ষেপটি ভারতের উন্নত সাবমেরিন প্রকল্পের সাথে বড় চুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে। একটি জার্মান কোম্পানি এই চুক্তির জন্য শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা হয়ত উচ্চপর্যায়ে তদবির করেছে।

জার্মানি ভারতের সামরিক বাজারে ফ্রান্সের সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। ফ্রান্স ভারতের কাছে সামরিক সামগ্রীর একটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহকারী। রাশিয়ার প্রতিযোগী হয়ে উঠলে জার্মানিও তার উপস্থিতি প্রসারিত করার সুযোগ দেখছে। ভারতের অস্ত্র আমদানির বৈচিত্র্য থেকে বোঝা যায়, জার্মানির নিজস্ব জায়গা তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।

ভারত তার সামরিক প্রয়োজনের জন্য রাশিয়া, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইস্রায়েলের উপর নির্ভরশীল। জার্মানি কেন পিছিয়ে থাকবে।

২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর কাছে ছোট অস্ত্র বিক্রিতে বাধা দিয়েছিলেন। 

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর জার্মানি তার বৈদেশিক নীতি ও প্রতিরক্ষানীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু করে, যখন চ্যান্সেলর শোলজ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এই বছরের শুরুর দিকে জার্মানি ভারতীয় নৌবাহিনীর ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প৭৫১-এ অংশগ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যায়।

গত জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময় জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব মডেলের অধীনে’ ভারতে ছয়টি উন্নত সাবমেরিন নির্মাণের কথা বলেছিলেন। পিস্টোরিয়াস মুম্বাইতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা পিএসইউ মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স পরিদর্শন করেন, যেখানে জার্মান জাহাজ নির্মাতা থিসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস ও প্রকল্প৭৫১-এর অধীনে ছয়টি স্টিলথ সাবমেরিন নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন।

ভারত এর আগে উনিশ আশির দশকের শেষ দিকে জার্মানির হাওল্ডটসওয়ার্ক-ডয়েচে ওয়ের্ফ্ট থেকে চারটি সাবমেরিন সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে দুটি যথাক্রমে ১০৯২ ও ১০০৪ সালে এমডিএলে নির্মিত হয়েছিল। বাকি দুটি জার্মানি থেকে এসেছিল।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন