Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

তবে কি ট্রাম্পের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে মেলেনিয়ার?

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:২৫ এএম

তবে কি ট্রাম্পের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে মেলেনিয়ার?

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আইওয়া থেকে শুরু করে  ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুপার টুয়েসডে ভিক্টরি পার্টি, কোথাও মেলেনিয়া ট্রাম্পকে দেখা যায়নি। শেষে সাংবাদিকরা মেলেনিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, ট্রাম্পের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা? উত্তরে তিনি শুধু বলেছিলেন, সঙ্গে থাকুন।  

চলতি বছরের মার্চে ফ্লোরিডায় প্রাথমিক ভোটের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গিয়ে ভোট দিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন মেলেনিয়া। তারপর থেকে তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। তবে ব্যতিক্রম ছিল এপ্রিলে কয়েকটি তহবিল সংগ্রহের কর্মসূচি এবং ছেলের উচ্চ বিদ্যালয় স্নাতকের দিন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার মামলার বিচার মাসব্যাপী চলার সময়ও নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের সঙ্গে মেলেনিয়াকে দেখা যায়নি। গত মাসে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সময়ও তিনি সঙ্গে ছিলেন না। কিংবা রায়ের পরদিন ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্পের বক্তব্যের সময়ও মেলেনিয়া তার সঙ্গে ছিলেন না। এমনকি গত ১৪ জুন ট্রাম্পের ৭৮তম জন্মদিনে তার ফ্যান ক্লাবের দেওয়া জন্মদিনের পার্টিতেও মেলেনিয়াকে দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনী প্রচারেও তাকে দেখা যায়নি।  

ফার্স্ট লেডিদের নিয়ে কাজ করা ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ক্যাথরিন জেলিসন বলছেন, বিচারের সময় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ট্রাম্পের পাশে মেলেনিয়ার অনুপস্থিতি অস্বাভাবিক।

তবে জেলিসন এও বলেছেন, মেলেনিয়ার ক্ষেত্রে এটা নিয়ে খুব বিস্মিত হওয়া উচিত না। কারণ প্রথাগতভাবে রাজনীতিবিদদের স্ত্রীরা যা করেন তা তিনি অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়। ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও তিনি খুব একটা পাদপ্রদীপের আলোতে ছিলেন না। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের সময়ও তাকে সব সময় স্বামীর সঙ্গে দেখা যায়নি। 

জেলিসন অবশ্য বলেছেন, তবে এই দম্পতি যা কিছু করছেন তার সবই একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং তার স্ত্রীর আচরণের যে স্ট্যান্ডার্ড তার সঙ্গে মানানসই বলে মনে হচ্ছে না। 

অন্য রাজনীতিকরা তাদের স্ত্রীদের ওপর যেমন নির্ভর করেন, মেলেনিয়া ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। অনেক সময় পুরুষ রাজনীতিকরা নারী ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের স্ত্রীদের দ্বারস্ত হন। আবার স্ত্রীদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে তারা বুঝাতে চান সম্ভাব্য পথের বাইরে দিয়েও তারা যেতে পারেন। এবারও আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে অনেক রাজনীতিবিদদের তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। 

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ট্রাম্পের শীর্ষ তহবিল সংগ্রাহক বা সম্প্রতি তার ভবন মার-এ-লাগোতে গেছেন এমন অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা কেউ বলতে পারেননি, মেলেনিয়াকে তারা ফ্লোরিডার ওই ভবনে দেখেছেন। এই ব্যাপারে মেলেনিয়ার মন্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার তার অফিসে যোগাযোগ করা হলেও, তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।  


নিউইয়র্কে বিচারকাজ চলার সময় সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে বার বার জিজ্ঞেস করেছেন মেলেনিয়া কোথায়। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। ট্রাম্প পরিবারের জন্য সময়টি কঠিন উল্লেখ করেই ট্রাম্পের মিত্ররা তখল বলছিলেন, ছেলের স্কুলের ব্যস্ততা থাকায় ট্রাম্পের সঙ্গে মেলেনিয়া উপস্থিত থাকতে পারছেন না।  

ট্রাম্পের আইনজীবী টড ব্ল্যাঞ্চকেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে মেলেনিয়ার সঙ্গে তার কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, মামলার ধরন অনুযায়ী এটি খুব কঠিন মামলা। তথ্য প্রমাণ ও এর ইতিহাস সব মিলিয়ে এটা কঠিন মামলা। সুতরাং এসবের বাইরে কোনো বিষয়ে আমি আলাপ করতে চাইনি। 

মামলা চলার সময় কিছু সাক্ষ্য প্রচারিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয় ২০০৬ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্প কিভাবে পর্ন অভিনেতা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলেন। সময়টি ছিল ট্রাম্প-মেলেনিয়ার ছেলে ব্যারনের জন্মের চার মাস পর। যদিও ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী এবং ট্রাম্পের প্রধান সহায়তাকারী মাইকেল কোহেন সাক্ষ্য দেন, ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ভেবে ওই কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ায় যতটা যত্নবান ছিলেন, ওই কেলেঙ্কারি তার বিয়েকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে সে ব্যাপারে ততটা যত্নবান ছিলেন না।

তবে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের যোগাযোগ প্রধান হোপ হিক্স সাক্ষ্য দেন, প্লেবয় মডেল কারেন ম্যাকডুগালের সঙ্গে সম্পর্কিত ওই গল্পটি তার স্ত্রী কীভাবে দেখেন তা নিয়ে ট্রাম্প চিন্তিত ছিলেন এবং যেসব সংবাদপত্রে এই খবর ছাপবে সেগুলো তাদের বাসভবনে যেন না পৌঁছায় সে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। 



মামলায় জিতলে কি হতো?

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৩৪টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার পরও নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে কিছু পোস্ট করেননি মেলানিয়া। ট্রাম্পের বড় ছেলেরা রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানান এবং রায়ের নিন্দা করেছিলেন। আর মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ইনস্টাগ্রামে নিজের ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লিখেন, বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ছোট মেয় টিফানি ট্রাম্প গত মাসে বিচারের সমাপনী যুক্তির দিন ট্রাম্পের সঙ্গে আদালতে গিয়েছিলেন।

রায়ের পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তার স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, আমি মনে করি এটা তার জন্য খুবই কঠিন। আমি বলতে চাচ্ছি, সে ভালো আছে। কিন্তু, এটাতো জানেন, তাকে এই সমস্ত বাজে কথা পড়তে হবে।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মেলেনিয়ার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রায়ই বক্তব্যে তার কথা উল্লেখ করেন এবং নিজেদের মধ্যে হওয়া কথা সমর্থকদের সঙ্গে বিনিময় করেন। সমর্থকদের বুঝান মেলেনিয়া এখনও ট্রাম্পকে মতামত দিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করছেন। 

‘ক্লাব ৪৭’ ফ্যান গোষ্ঠীর সভাপতি ল্যারি স্নোডেন বলেন, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে শেষবার সাবেক ফার্স্ট লেডিকে ‘ট্রাম্পেটস’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেখেছিলেন। ট্রাম্পেটস হলো ট্রাম্পের নারী সমর্থকদের একটি গোষ্ঠী। 

স্নোডেন বলেন, তার সঙ্গে কখনও মেলেনিয়ার ব্যক্তিগত আলাপ হয়নি। তবে যখন তাকে সেখানে দেখা যায, তখন মেলেনিয়া ‘খুব উৎফুল্ল’ ছিলেন। তিনি খুব খুশি ছিলেন এবং হাসতে ছিলেন। যে কেউ এগিয়ে আসলে তার সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং হাই-হ্যালো করছিলেন। 

স্নোডেন জানান, তিনি আশা করেন মেলানিয়া পুরো নির্বাচনী প্রচারাভিযানে থাকবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন।  

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন