Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে রাশিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:০৯ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে রাশিয়া

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে করমর্দন করছেন দুই দেশের নেতা। ছবি: এএফপি

চীন সাগরের আশপাশে রয়েছে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন ও তাইওয়ান। তাদের কাছের দুই প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনাম। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একযোগে এই দুই দেশ ভ্রমণ করায় বেশ উত্তেজিত আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।

ভিয়েতনামের আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন উত্তর কোরিয়া সফর করেন। সে সময় পুতিন ও কিম জং উন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যেখানে তারা প্রতিশ্রুতি দেন রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়া যেকোনো দেশ আক্রান্ত হলে তারা একে অপরকে সাহায্য করবেন।

কিম বলেছেন, এই চুক্তি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

এই চুক্তি পশ্চিমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। সারা বিশ্বে এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। এরপর পুতিন কোরিয়া থেকে দেশে না ফিরে গেলেন ভিয়েতনাম।

রাশিয়া ও ভিয়েতনাম শীতল যুদ্ধের সময় থেকে ঘনিষ্ঠ মিত্র। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র যথারীতি পুতিনের ভিয়েতনাম সফরের সমালোচনা করেছে। সমালোচনা উপেক্ষা করে পুতিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার করেছেন বলে রয়টার্সের খবর।

ভিয়েতনাম এক অর্থে একটি বিরল দেশ যেখানে রাশিয়ার একজন প্রেসিডেন্ট (পুতিন) পাঁচবার সফর করেছেন। পুতিনের প্রশংসা করেছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো লাম। উত্তরে পুতিন বলেছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব বাড়ানো রাশিয়ার অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।

যুক্তরাষ্ট্র পুতিনের ভিয়েতনাম সফরের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘পুতিন ইউক্রেনে যে আগ্রাসন চালাচ্ছেন তার প্রতি সমর্থন জোগাড় করতে এই সফর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।’ সে কথা বলাই বাহুল্য। পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থিক ক্ষতি হয়েছে বিপুল। কিন্তু ইউক্রেনে এই হামলা না চালিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। কারণ রাশিয়ার শত্রু ইউরোপ-আমেরিকার সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনকে নতুন সদস্য পেতে মরিয়া। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পেলেই রাশিয়ার নাকের ডগায় (ইউক্রেনে) সামরিক ঘাঁটি গাড়তে পারে ন্যাটো। 

হামলা চালিয়ে রাশিয়া আপাতত ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে দূরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু তার চ্যালেঞ্জ কমেনি। যুদ্ধ এখনও চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কবে সেই যুদ্ধ শেষ হবে তারও ঠিক নেই। এই যুদ্ধের ব্যয় রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাছাড়া এই যুগে রাশিয়ায় যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহও কঠিন কাজ।

সুতরাং পুতিনকে এখন মিত্রের খোঁজে বিশেষ জোর দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকার চিরশত্রু চীন ও উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়েছে।

তবে ভিয়েতনামের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব অনেক পুরনো হলেও দেশটি তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ ভাবিত। জনগণের জীবনমান বাড়াতে হলে চাই বাণিজ্য। সেক্ষেত্রে অন্যদের মতোই ভিয়েতনামও ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক জোরালো রাখতে তৎপর।

অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ভুলে যায়নি যে, ১৯৫০-এর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) ভিয়েতনামকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া আক্রমণ করার পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে। সে সময় সোভিয়েত-সাহায্যের ওপর অনেক নির্ভরশীল ছিল ভিয়েতনাম।

সংকটাপন্ন এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়াকে বেশ একটা হুমকি দিয়েছে। তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, রাশিয়ান ও উত্তর কোরিয়ার চুক্তি দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দক্ষিণ কোরিয়া ওই চুক্তির নিন্দা করেছে। তাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চ্যাং-হো-জিন বলেছেন, তার দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চায়।

পুতিনও সঙ্গে সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিলে দক্ষিণ কোরিয়া বড় ভুল করবে!’

জাপানও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক চুক্তি’ নিয়ে। জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, ‘চুক্তিটি অগ্রহণযোগ্য।’

বিশ্লেষকরা বলেছেন, চুক্তিটি বিশ্বের পাশাপাশি এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। চুক্তিটির ফলে কোরীয় উপদ্বীপের যেকোনো সংঘাতে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করতে পারবে। উত্তর কোরিয়া সেটাই চায়।

দুই কোরিয়ার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার যে-চেষ্টা মাঝেমধ্যে হয়, তা আবারও বাধাগ্রস্ত হবে সন্দেহ নেই। গত বৃহস্পতিবারই উত্তেজিত উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় গুলি ছুড়েছে। যদিও তারা বেশি দূর না এগিয়ে পিছু হটেছে। এমন পরিস্থিতিতে সিউল, টোকিও, ওয়াশিংটন বড় বিপদ দেখতে পাচ্ছে বলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন