Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হজ করতে গিয়ে তীব্র দাবদাহে এক হাজারেরও বেশি মৃত্যু

Icon

ইউএনবি

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

হজ করতে গিয়ে তীব্র দাবদাহে  এক হাজারেরও বেশি মৃত্যু

সদ্যসমাপ্ত হজ মৌসুমে সৌদি আরবে হজ পালন ও ইসলামি পবিত্র স্থান ভ্রমণকালে মরুভূমির তীব্র দাবদাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মিশরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি তাদের নাগরিক। তবে হাজিদের মৃত্যুর বিষয়ে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিশরীয় সরকার এক ঘোষণায় জানিয়েছে, এই বছরের হজের সময় ক্রনিক ডিজিজে ৩১ জন হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে যারা ছিলেন অনুমোদিত হজযাত্রী। এর বাইরে অন্যান্য নিহত হজযাত্রীদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংখ্যা জানায়নি মিশর।

তবে মন্ত্রিপরিষদের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হজ চলাকালে কমপক্ষে ৬৩০ জন মিশরীয়র মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মক্কার আল-মুয়াইসেম এলাকার জরুরি কমপ্লেক্সে মারা গেছেন। নিহতদের অধিকাংশকেই সৌদি আরবে দাফন করা হয়েছে।

অননুমোদিত হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে হজ চলাকালে অভিযান চালায় সৌদি কর্তৃপক্ষ। দশ হাজারেরও বেশি মানুষ এই অভিযানে অনুনমোদিত হিসেবে চিহ্নিত হয় যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মিশরীয়। এদের মধ্যে অনেকেই পায়ে হেঁটে বা যেভাবে পেরেছেন মক্কা ও এর আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে পৌঁছেছেন কিন্তু প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচার জন্য তাদের কোনো থাকার জায়গা ছিল না। 

এক বিবৃতিতে মিশরীয় সরকার জানিয়েছে, এবারের হজযাত্রায় ১৬টি ট্রাভেল এজেন্সি হজযাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মক্কায় যাওয়ার বা হজের সঠিক ভিসা না থাকলেও এসব সংস্থা অবৈধভাবে ওই হজযাত্রীদের সৌদি আরব ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সরকার থেকে জানানো হয়।

নিহতদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ১৬৫ জন, ভারতের ৯৮ জন এবং জর্ডান, তিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া ও মালয়েশিয়ার কয়েক ডজন হজযাত্রী। এছাড়াও দুই মার্কিন হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃত্যুর পেছনে অতিরিক্ত গরমকে দায়ী করেছে জর্ডান ও তিউনিসিয়াসহ কিছু দেশ।

হজ মৌসুমে পাঁচ দিনের হজযাত্রায় একসঙ্গে ২০ লাখেরও বেশি লোক সৌদি আরবে অবস্থান করেন। সেসময় মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হজযাত্রার ইতিহাসে ব্যাপক আকারে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু এবং মহামারীও দেখা গেছে। কিন্তু এবারের হিসাব ছিল অস্বাভাবিক রকমের বেশি, যা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

২০১৫ সালে হজ পালনের সময় মিনায় পদদলিত হয়ে ২ হাজার ৪০০ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর এই সংখ্যা কোনোদিনই স্বীকার করেনি সৌদি আরব। একই বছরের শুরুতে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ক্রেন ধসে ১১১ জন নিহত হয়। হজে দ্বিতীয় সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ছিল ১৯৯০ সালে পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জনের মৃত্যু।

সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেটিওরোলজির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর হজের সময় মক্কা ও শহরের আশেপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এমনকি শয়তানের প্রতীকী পাথর ছুঁড়ে মারতে গিয়েও অজ্ঞান হয়ে পড়েন অনেক হজযাত্রী।

সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ২২টি দেশের ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি এবং প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দাসহ ১.৮৩ মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান হজ পালন করেন। পাঁচ দিনের এই হজ আয়োজনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে সৌদি আরব। কিন্তু দিনকে দিন বাড়তে থাকা হজযাত্রীর সংখ্যা এই সুরক্ষা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলে।

এছাড়াও এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিশেষজ্ঞদের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবও যদি বিশ্ব প্রশমিত করতে পারে, তবুও ২০৪৭ থেকে ২০৫২ সাল এবং ২০৭৯ থেকে ২০৮৬ সাল পর্যন্ত 'চরম বিপৎসীমা' অতিক্রম করা তাপমাত্রায় হজ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতি বছর চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ইসলাম ধর্মানুসারীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হজ আয়োজিত হয়। চাঁদ দেখার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১১ দিন এগিয়ে আসে হজের দিন। সে অনুযায়ী ২০২৯ সালের মধ্যে হজ এপ্রিল মাসে চলে আসবে এবং এর কয়েক বছর শীতকালে হজ পালনের সময় পড়বে তখন আবহাওয়াও কিছুটা সহনশীল থাকবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন