Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পুতিনের ভিয়েতনাম সফর ফের সামনে আনল ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোম্যাসি’

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

পুতিনের ভিয়েতনাম সফর ফের সামনে আনল ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোম্যাসি’

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরে আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভিয়েতনাম সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে দেশটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বৈঠক করবেন। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে ভিয়েতনামের ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোম্যাসি’কে আবারও আলোচনায় নিয়ে আসলো।  

এদিকে, ফরাসি বার্তা সংস্থা পুতিনেরি এই সফরের নেপথ্য এবং সফর থেকে দেশ দুটি কী পেতে পারে তা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছে।

পুতিন কেন ভিয়েতনাম গেলেন?

ভিয়েতনামের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ট সম্পর্ক খুঁজলে ১৯৫০-এর দশকে ফিরতে হয়। তবে হ্যানয় ইউক্রেনে চালানো সামরিক অভিযানের ব্যাপারে প্রকাশ্যে পুতিনকে ‘পুরোপুরি  সমর্থন’ দেয়নি। যদিও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন থেকে এই সমর্থন পেয়েছেন পুতিন। 

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার উৎপাদনের পাওয়ার হাউস ভিয়েতনাম বিগত কয়েক বছর ধরে খুব সচেতনভাবেই পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক এড়িয়ে চলছে। তবে কোনো দেশের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলে দেশটি। এই কূটনীতিক কৌশলকেই দেশটির কমিউনিস্ট নেতারা ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোম্যাসি’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশটি নমনীয়তার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করে। 

প্রসঙ্গত: ব্যাম্বু ডিপ্লোমেসি কৌশলে সময় বুঝে দুপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও কট্টরভাবে কোনো পক্ষের সমর্থন করে না ভিয়েতনাম। ঠিক যেমন বাতাসে বাঁশঝাড়ের বাঁশগুলো বাতাসের তোড়ে এদিক-ওদিক কিছুটা হেলে পড়লেও, বাতাস থামলেই আবার নিজেদের জায়গায় স্থির হয়ে যায়।

এর প্রমাণও পাওয়া যায়। যেমন সাম্প্রতিক মাসগুলোতেই ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হ্যানয় সফর করেছেন। এখন সফরে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। 

পুতিনের এই সফর নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক ড. হুং লে থু বলছেন, ‍নিষেধাজ্ঞার আওতায় এবং বিশ্বের ‘অধিকাংশের কাছেই যিনি প্রত্যাখ্যাত’ সেই পুতিনকে গ্রহণ করে হ্যানয় বহুমুখী প্রতিরোধের মধ্যে কতটুকু এগোতে পারে এবং বিশ্বের অন্য বড় শক্তিধর দেশ এখনো হ্যানয়কে গ্রহণ করে কিনা তার একটি পরীক্ষা হয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, পুতিনও এ সফরের মাধ্যমে দেখানোর সুযোগ পাবেন তারও আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।

দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাস কী?

হো চি মিনের ভিয়েতনাম সরকারকে প্রথম দিকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের মধ্যে একটি ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ১৯৫০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। 

১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারের মতো ভিয়েতনামি শিক্ষার্থী সোভিয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ের ভিয়েতনামি সরকারগুলো কয়েক যুগ ধরে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ক্রেমলিনের ‍ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল।

ভিয়েতনামি সামরিক সংবাদপত্রের ‍সূত্র অনুযায়ী, আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের বন্ধু ভিয়েতনামি কমিউনিস্টদের যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার এবং ট্যাঙ্ক দিয়ে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, তারা প্রায় ১১ হাজার সৈন্যও পাঠিয়েছিল। 

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও এই সম্পর্ক টিকে ছিল। স্টকহোক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের আমদানিকৃত অস্ত্রের ৮০ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। মস্কো ২০০২ সাল পর্যন্ত দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনামের কৌশলগত ক্যাম র‌্যানহ বে’কে ব্যবহার করেছে।  

দেশ দুটি ২০১২ সালে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব হালনাগাদ করে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও ভিয়েতনামের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক রয়েছে। 

পুতিনের এই সফরে কী নিয়ে আলোচনা হবে?

রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই সফরে তারা বাণিজ্য, শিক্ষা এবং জ্বালানি ইস্যুতে কথা বলবেন। সুনির্দিষ্ট্ করে বললে, ভিয়েতনামের ক্লি পাওয়ারে রূপান্তরে মস্কো কিভাবে সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। 

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ত্র রপ্তানি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উদীয়মান অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে যোগদানে হ্যানয়কে সমর্থনের ব্যাপারে মস্কোর করা প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলোও আলোচনায় ঠাঁই পাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া থেকে ভিয়েতনামের অস্ত্র আমদানি কমে গেছে। 

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক কার্ল থায়ার বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন না করে কি করে ব্যবসা করা যায় সেই পথ বের করতে গোপনে দুই পক্ষ কাজ করতে পারে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন