বেশি মন্ত্রণালয় চান জোট সঙ্গীরা, চাপে রয়েছেন মোদি
২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সরকার গঠন করতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) জোটের দলগুলো ওপর নির্ভর করতে হয়নি। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোট সঙ্গীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে। তাদের মন জুগিয়ে না চললে ভাঙতে পারে জোট। আর জোট ভাঙলে সরকার গঠন করতে পারেবন না মোদি।
তাই নির্বাচনের পরে দিন ভারতের দিল্লিতে পৌঁছেই সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে মোদির কাছে এক গুচ্ছ দাবি-দাওয়া জানিয়ে রাখলেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক-নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু।
রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের পাশাপাশি নীতিশ দলের জন্য চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ এবং চন্দ্রবাবু তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রীর পদ দাবি করছেন। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদও চাইছেন চন্দ্রবাবু।
এদিকে বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে বিহারের চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, জিতনরাম মাঁঝির হাম, উত্তরপ্রদেশের আপনা দল, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে আস্তিন গোটাতে শুরু করে দিয়েছে। লক্ষ্য বিজেপিকে চাপে রেখে বেশি সংখ্যক মন্ত্রিত্ব আদায় করে নেওয়া।
ভোটের আগে নীতিশের সাথে বিজেপির যে সমঝোতা হয়েছিল, তাতে এনডিএ ক্ষমতায় এলে নীতিশকে তিনটি পূর্ণমন্ত্রীর পদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে হাঁসফাঁস করা বিজেপির কাছে চারটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন নীতিশ।
সূত্রের মতে, মূলত পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলো দিকে নজর নীতিশের। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, পানিসম্পদের মতো মন্ত্রণালয়।
সূত্রের মতে, বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি ২০২৩ সালে বিহারে নীতিশ আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার পরে রাজ্যের প্রায় ৯৫ লাখ পিছিয়ে থাকা পরিবারকে দুই লাখ রুপি আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছেন। আগামী বছর বিহারে নির্বাচন। তাই পাঁচ বছরের ওই প্রকল্পে কেন্দ্র যেন চলতি অর্থবর্ষে নিজেদের অংশের টাকা বাড়ায়, সেই দাবি জানিয়েছেন নীতিশ।
সূত্র জানায়, ইউপিএ-এর ধাঁচে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে চন্দ্রবাবুর দাবি, তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রী পদ। নীতিশের মতোই পানিসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে নিজেদের সাংসদের দেখতে চাইছেন চন্দ্রবাবু। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ও। এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ায় রাজ্যের আর্থিক চাপ সামলাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি করে প্রায় এক দশক ধরে সরব নাইডু। এই মুহূর্তে রাজ্যের মাথায় সাড়ে তিন লাখ কোটি রুপির দেনা। যা মেটাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন নাইডু।
ছোট দলগুলোর মধ্যে বিহারে চিরাগ পাসোয়ানের পেয়েছে পাঁচটি আসন।
তাদের দাবি, একটি পূর্ণ ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। ওই রাজ্যেই একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঝির হাম। তাদেরও দাবি, একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ। মহারাষ্ট্রে সাতটি আসন পেয়েছে একনাথ শিন্দের শিবসেনা। তারাও একজন পূর্ণ ও এক জন প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে।
মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধুরী, নিজ দলের অনুপ্রিয়া পটেল, জেডিএসের এইচ ডি কুমারস্বামীরাও। অতীতে মোদি সরকারের যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, এই সব ছোট দলকে গুরুত্ব দিতেই দেখা যায়নি বিজেপিকে।
পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া রাস্তা নেই বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দাবি না মানা হলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে। যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘যদি নীতিশ বা নাইডুর একজনও বেরিয়ে যান, তা হলে সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দু’জন যদি এনডিএ পরিত্যাগ করেন, সমস্যা তৈরি হবে।’
যদিও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, একনায়কের ধাঁচে প্রথমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর দেশ চালানোর পরে শরিকি কাঁটা কি সামলাতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি?