ছবি: সংগৃহীত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সর্বশেষ সপ্তম দফার ভোট গ্রহণ আজ শনিবার (১ জুন) শেষ হয়েছে। আগামী ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে প্রকাশ করা হচ্ছে বুথ ফেরত জরিপের (এক্সিট পোল) ফল। শনিবার সন্ধ্যায় অন্তত চারটি সংবাদমাধ্যমের বুথ ফেরত জরিপে ভারতে তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। সব কয়টি জরিপে এগিয়ে রাখা হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ)। তবে কখনো কখনো বুথ ফেরত জরিপ পুরোপুরি সঠিক হয় না। বলা যায়, বুথ ফেরত জরিপের আভাস পুরোপুরি সত্য হয় না। আসুন জেনে নেওয়া যাক বুথ ফেরত জরিপের আদ্যোপান্ত।
বুথ ফেরত জরিপ কি?
বুথ ফেরত জরিপ আসলে কী? এটা মূলত সম্ভাব্য বিজয়ী সম্পর্কে আভাস এবং ভোটারের ধরন বোঝার জন্য বিভিন্ন সংস্থা ভোটারদের মধ্যে পরিচালনা করে। মনে রাখতে হবে এই জরিপের ফল সর্বদা সঠিক হয় না। তবে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে কিছুটা আভাস দেয় মাত্র।
কতটা সত্য হয় এই জরিপ?
এখন কথা হলো, জরিপগুলো কিভাবে পরিচালনা করা হয়? কেউ কেউ বুথ ফেরত জরিপটি কারা বা কোন সংস্থা পরিচালনা করছে বা যে টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনা করেছে তা দেখে এর যথার্থতা বিচার করেন। অনেকে আবার নমুনার আকারের ওপর নির্ভর করেন—একটি সাধারণ ধারণা হলো নমুনার আকার যত বড় হবে জরিপ তত বেশি নির্ভরযোগ্য হবে।
জরিপ কিভাবে চালানো হয়
জরিপগুলি কীভাবে করা হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। জরিপটি মূলত একটি ধারণার ভিত্তিতে কাজ করে যেখানে একটি প্রশ্নাবলী ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক উত্তরদাতার উত্তরে পাওয়া তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটা নতুন কোনো পদ্ধতি নয়। ভারতে এটি শুরু হয়েছিল ১৯৫৭ সালের দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনের সময়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ওপিনিয়ন ওই জরিপটি পরিচালনা করেছিল।
এই জরিপগুলো কতটা বিস্তৃত?
এই জরিপগুলো কে কি সত্যিই সঠিক বিবেচনা করা উচিত? আসলে— না। কারণ জরিপকারী সংস্থাগুলো একাধিকবার জরিপের ফলে ভুল পেয়েছেন।
জরিপের গণনা পদ্ধতিটি সময়সাপেক্ষ এবং অধিক শ্রম ব্যয় হয়। কারণ জরিপে প্রতিটি আসনের ব্যাপারেই আভাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়। সংস্থাগুলো যখন দাবি করে তারা আসন-ভিত্তিকই আভাস করছে, তখন তাকে বিস্তৃত জরিপ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। আর এটি ঘটে যখন নমুনার আকার কয়েক লাখের চেয়ে বেশি হয়। তবে কিছু সংস্থা এমন গণনা পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করেছে যার ফলে তুলনামূলকভাবে কম সময় এবং অর্থ ব্যয়ে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যায়।
যদি কোনো বুথ ফেরত জরিপে দাবি করা হয়, সব নির্বাচনী এলাকা থেকেই নমুনা নেওয়া হয়েছে, তবে বাস্তবে কিছু আসন থেকে সত্যিই নমুনা নেওয়ার দরকার নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বারাণসী বা বিজেপি সভাপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা গান্ধীনগরে জরিপ পরিচালনা করে কি সময় এবং অর্থ নষ্ট করার মানে আছে? যদি কেউ রাজ্য অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকাগুলি গভীর মনোযোগ সহকারে দেখেন এমন অনেক আসন বাদ দেওয়া যেতে পারে এবং সবচেয়ে সঠিক আভাসও দিতে পারেন।
২০১৯ সালের বুথ ফেরত জরিপ কতটা সঠিক ছিল?
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে হলো, ২০১৯ সালের আভাস কী ছিল এবং সেগুলি কতটা সঠিক ছিল? ২০১৯ সালে গড়ে ১৩টি বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়েছিল, এনডিএ সম্মিলিতভাবে ৩০৬টি আসন পাবে এবং ইউপিএ পাবে ১২০টি। যদিও শেষপর্যন্ত এনডিএ ৩৫৩টি আসনে জিতেছিল। আর ইউপিএ পেয়েছিল ৯৩টি। এর মধ্যে বিজেপি এককভাবে ৩০৩টি এবং কংগ্রেস ৫২টি আসন পেয়েছিল।