Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আদালতে দোষী ট্রাম্প কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম

আদালতে দোষী ট্রাম্প কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি আদালত এ রায় দেন। ওই মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 
এদিকে আদালতের এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ড হতে পারে।
তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাঁকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি। আপাতত, ট্রাম্প কোনো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের সম্মুখীন হননি, এবং তিনি নির্বাচনে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে চলা অন্যান্য মামলাগুলি এখনও চলছে। সিদ্ধান্তগুলো এখন সবটাই ফেডারেল বিচারকদের হাতে।
এখন একটি প্রশ্ন সামনে আসছে, সেটি হলো ট্রাম্প কী আগামী নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন?
সোজা কথায় বলতে গেলে ট্রাম্প অবশ্যই আপিল করতে পারবেন। এই মামলার রায়ের পরপরই ট্রাম্পের আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ মামলার বিচারক হুয়ান মেরচানের কাছে ট্রাম্পকে নির্দোষ দাবি করে খালাস দিতে বলেন। কিন্তু বিচারক তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে আগামী ১১ জুলাই মামলার দণ্ডাদেশ দেওয়ার পরপরই আপিল করতে পারবেন। 
দণ্ডাদেশ দেওয়ার পর ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে ৩০ দিন সময় পাবেন মামলার রায় বাতিলের এবং এরপর আরও ছয় মাস সময় পাবেন পূর্ণাঙ্গ আপিলের জন্য। এর সহজ অর্থ হলো—তিনি প্রায় সাত মাস সময় পাবেন আপিলের জন্য, যা নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। 
অল্প কথায় বলতে গেলে, ট্রাম্প অবশ্যই এর পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসের আইনের অধ্যাপক রিচার্ড এল হাসেন দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এমন কোনো আইন নেই, যা কোনো অপরাধীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে বিরত রাখতে পারে। 
রিচার্ড এল হাসেন বলেন, ‘আইনগত দিক থেকে ট্রাম্পের প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো হেরফের ঘটেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের মাত্র অল্প কয়েকটি বিধিনিষেধ রেখেছে। সেগুলো হলো—কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হবে, একজন স্বাভাবিক জন্মগত নাগরিক কিংবা কমপক্ষে ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস।’ 
হাসেন আরো বলেন, ‘অধিকন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তার কারণে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার কারণে অঙ্গরাজ্যগুলো তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারবে না।’ 
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এই রায় কী গুরুত্ব বহন করে 
এই রায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে থাকা অন্য তিনটি মামলার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই গুরুত্ব বহন করে। এই মামলাগুলো আগে যেমন চলছিল, এখনো সেই গতিতেই চলতে থাকবে। প্রেসিডেনশিয়াল ইমিউনিটি দাবি করায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধ থাকা নির্বাচনী ফলাফল উল্টে দেওয়ার মামলার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছে। 
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজ বাড়িতে নেওয়াসংক্রান্ত মামলাও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছে এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মামলায় ট্রাম্প ও অন্য বিবাদীরা যিনি অভিযোগ এনেছেন তাঁর বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ তোলায় সেই মামলাও আইনি জটিলতায় পড়ে গেছে। ফলে আপাতত এই মামলার রায় হলেও অন্য মামলাগুলো খুব একটা প্রভাবিত হচ্ছে না।
১৪তম সংশোধনীতে কি বলা আছে ?
সুপ্রিম কোর্ট মার্চ মাসে সর্বসম্মতিক্রমে রায় দেয় যে রাজ্যগুলো ১৪তম সংশোধনীর ৩ ধারার অধীনে ট্রাম্পকে তাদের ব্যালট থেকে দূরে রাখতে পারে না, এই ধারার অধীনে সংবিধানকে সমর্থন করে শপথ নেওয়ার পরে "বিদ্রোহ বা বিদ্রোহে জড়িত" লোকদের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। অসংখ্য আইনজীবী যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে ৬ জানুয়ারি, ২০২১ এর আগে ট্রাম্পের ক্রিয়াকলাপের আগে পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি অভিযোগ থাকলেও কোনোটিতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। ডিসেম্বরে, কলোরাডো সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য বলে মনে করে এবং মেইনের সেক্রেটারি অফ স্টেটও তাই করেছিল। 
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট  কনজারভেটিভদের সুপারমেজরিটির নেতৃত্বে, ট্রাম্পের দ্বারা নিযুক্ত তিন বিচারপতিসহ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ফেডারেল অফিসের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ধারা ৩ বলবৎ করার ক্ষমতা শুধুমাত্র কংগ্রেসেরই আছে। হাউসের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় কংগ্রেস তা করতে পারছে না। ১৪তম সংশোধনী ফৌজদারি মামলা থেকে পৃথক, যার অর্থ নির্বাচন সম্পর্কিত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না। 
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির আইনের একজন সহকারী অধ্যাপক অ্যান্থনি মাইকেল ক্রেইস বলেছেন, কংগ্রেস এমন লোকদের একটি গ্রুপকে মনোনীত করতে পারে যাদের জন্য ধারা ৩ প্রযোজ্য (যেমন লোকেরা যারা কনফেডারেসির জন্য লড়াই করেছিল) বা নির্দিষ্ট অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে । ট্রাম্পের কোনো অপরাধের জন্যই সেই শাস্তি বহন করার সুযোগ নেই। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ,রিচার্ড এল. হ্যাসেন মনে করেন-'ট্রাম্পের বিচার হবে কি না, তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন নাকি মুক্তি পাবেন সেটি তাঁর নির্বাচনী লড়াইয়ের যোগ্যতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলকে উল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত ফেডারেল মামলার একটি অভিযোগ যা নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের সমান ছিল কিন্তু কংগ্রেস কয়েক দশক আগে সেই মামলা সরিয়ে দেয় ।
দল কি তার টিকিট বদলাতে পারে?
যেহেতু ট্রাম্প রিপাবলিকান কনভেনশনে প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন, পার্টির কাছে অন্য কাউকে মনোনীত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। পার্টির অফিসিয়াল কনভেনশন নিয়মের অধীনে, 'যদি একজন প্রতিনিধি অন্য কাউকে সমর্থন করার চেষ্টা করেন এই ধরনের সমর্থন স্বীকৃত হবে না।"
শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকানরা অন্য মনোনীত প্রার্থীর প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি। কনভেনশনের পর যদি তাকে দৌড় থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়, তাহলে দলের নেতারা তাকে প্রতিস্থাপন করতে পারেন; তারা ২০১৬ সালে "অ্যাক্সেস হলিউড" টেপ প্রকাশের পরে এটি করার কথা বিবেচনা করেছিলেন যেখানে ট্রাম্প নারীদের বিষয়ে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। সবটাই নির্ভর করছে দল কীভাবে ট্রাম্পের ওপর ওঠা অভিযোগগুলো দেখছে।
উল্লেখ্য, সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ করতে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় মোট ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ শুনানির পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সব অভিযোগেই দোষী ঘোষণা করেন ১২ সদস্যবিশিষ্ট জুরি। রায় ঘোষণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং বিচারকদের দিকে তিনি হতাশ তাকিয়ে ছিলেন। 
আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, তিনি ভুল কিছু করেননি এবং ‘এটি অপমান’। এটা তার জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।  এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রকৃত রায় হবে আগামী ৫ নভেম্বর।’ রায়ের পরপরই এর বিরুদ্ধে ট্রাম্প আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন