রাইসির মৃত্যু কি ইরানের ক্ষমতা ও পারমাণবিক কর্মসূচি পাল্টে দেবে?
ছবি: সংগৃহীত
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন। তাদের মৃত্যু পরবর্তী ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাইসির এই আকস্মিক মৃত্যু কি ইরানের শাসন ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন আনবে, বা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন হবে? বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
ইরানের প্রেসিডেন্টের হঠাৎ নিহতের ঘটনায় ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের দেশটির শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের আশা যারা করছেন, তারা হয়তো হতাশই হবেন। কারণ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার মৃত্যুতে ইরানের ক্ষমতার কোনো ধরনের পবিরর্তন আসবে না। তবে অভ্যন্তরীণভাবে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
রিচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানিয়ান লেকচারার ড. মেইর জাবেদানফার বলেছেন, এই ঘটনা শাসন পরিবর্তন করার মতো কিছুই না। তবে অভ্যন্তরীণভাাবে এর ব্যাপক পড়বে।
শুধু তাই নয়, বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের মৃত্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতায়ও কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের হয়ে প্রক্সি যুদ্ধ করা সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থনেও কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইরানের যে কর্মসূচি তাতেও এই দুর্ঘটনা তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।
এ ছাড়া ইরান যে বৈশ্বিকভাবে, বা আরও স্পষ্ট করে বললে, আঞ্চলিকভাবে যে প্রক্সি সামরিক তৎপরতা চালায় তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকোব আমিদররের বরাতে জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন শেষ সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনি শেষ কথা। তিনিই ইরানের নীতি ঠিক করেন।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়েছিল তাও অস্বীকার করেছিলে ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসি। শুধু তাই নয়, তিনি ইসরায়েলকে ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে রাইসি লিখেছিলেন, আমরা নায়কোচিত হামাসের অস্ত্রে এবং সাহসী সব প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য ভালোবাসা যারা ইসলামিক বিশ্বের জন্য গর্বের। প্রতিরোধের দৃঢ় সংকল্পে অটুট থাকা গাজার মানুষকে স্যালুট জানাই।
ইয়াকোব আমিদরর ব্যাখ্যা করেন, ইবরাহিম রাইসি এবং হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের বদলে অন্যরা আসবে এবং তারা হয়তো ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করবে। কিন্তু দিন শেষে প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত নেন না।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ৬৪ বছর বয়সী রাইসিকে খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি বিবেচনা করা হতো। তিনি ফাঁসি দেওয়া বিচারক ছিলেন। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে রাইসি অনেক লোককে ফাঁসির মঞ্চে পাঠিয়েছিল।
ব্যাখ্যা দিয়ে ইয়াকোব আমিদরর বলেন, একমাত্র বিষয় যেটি রাইসিকে আলাদা করে তুলেছিল তা হলো, বিদেশে থাকা বেশ কয়েকজন ইরানি গবেষক মনে করতেন তিনিই খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি।
প্রসঙ্গত : গতকাল রোববার ইরানের সীমান্ত এলাকায় আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বাঁধ উদ্বোধনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রেসিডেন্ট রাইসি হেলিকপ্টারে করে শহরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। এসময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
ওই সময় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হেলিকপ্টারটি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই অবতরণে বাধ্য হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছিল।
এদিকে, সোমবার (২০ মে) সকালে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন।
এর আগে ইরানের রেড ক্রিসেন্টের বরাতে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া গেছে। তুরস্কের আকিনসি ড্রোন (ইউএভি) দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্ত করে। পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টারে কোনো ‘প্রাণের চিহ্ন নেই’।
দুই ব্লেডের মাঝারি ধরনের এই হেলিকপ্টারে পাইলটসহ ১৫ জন চড়তে পারেন। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটিতে ফ্লাইট ক্রু ও নিরাপত্তারক্ষীসহ মোট কতজন যাত্রী ছিলেন। বেল-২১২ মডেলের ওই হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত।