Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল এত অস্ত্রসস্ত্র কোথায় পায়

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের ৮ মাস ও পশ্চিমা রাজনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৪ পিএম

ইসরায়েল এত অস্ত্রসস্ত্র কোথায় পায়

পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে পড়ছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেভাবে যুদ্ধ চালাচ্ছে তাই এই চাপের কারণ। ইসরায়েল সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র বিধ্বংসী বিমান অভিযান চালাচ্ছে গাজার ওপর।

ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করা উচিত। কারণ ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাদের কাছে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে পারছে না।

শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল একটি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব সমর্থন করেছে। ২৮টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে, ছয়টি বিপক্ষে এবং ১৩টি দেশ ভোট দেয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি, যারা ইসরায়েলের কাছে বিশাল সংখ্যায় অস্ত্র রপ্তানি করে, উভয়ই বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। জার্মানি বলেছে, তারা বিপক্ষে গেছে কারণ প্রস্তাবটিতে স্পষ্টভাবে হামাসের নিন্দা করা হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণে প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। তারা প্রধানত বেসামরিক ইসরায়েলি। এরপর ইসরায়েল গাজায় অবিরাম হামলা চালাচ্ছে যাতে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু নারী।

প্রশ্ন হচ্ছে ইসরায়েল এত অস্ত্রসস্ত্র কোথায় পায়? এতদিন ধরে যুদ্ধ চালানোর অর্থ আসে কোথা থেকে?

ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র রপ্তানি করে। তবে তাদের সামরিক বাহিনী আমদানি করা বিমান, বোমা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আর অর্থের একটি বিরাট অংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরাইলের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যা ইসরায়েলকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) বলছে, ২০১৯ ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান প্রচলিত অস্ত্র আমদানির ৬৯ শতাংশ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছরের একটি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে বছরে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়, যাতে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর সামরিক প্রভাব বজায় রাখতে পারে।

ইসরায়েল সেই অনুদান ব্যবহার করেছে এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটারের জন্য। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উন্নতমানের যুদ্ধবিমান বলে মনে করা হয়। ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এই বিমান ৭৫টির অর্ডার দিয়েছে এবং ৩০টির বেশি ডেলিভারি পেয়েছে। এই যুদ্ধবিমানের গর্বিত মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে আছে একমাত্র ইসরায়েল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যে আয়রন ডোম, অ্যারো ডেভিডস স্লিং সিস্টেমসহ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ইয়েমেনে অবস্থিত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরায়েল যুদ্ধের সময় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে।

হামাসের অক্টোবরের হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে।

মার্কিন মিডিয়া রিপোর্ট করেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের কাছে ১০০ বারের বেশি সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৪ হাজার রাউন্ড ট্যাংকের গোলা রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে অন্যান্য গোলাবারুদ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা ইসরায়েলের কাছে ৫০টি এফ-১৫ ফাইটার জেট বিক্রি করবে, যার দাম ১৮ বিলিয়ন ডলার। তবে কংগ্রেস এখনও এই চুক্তি অনুমোদন করেনি।

জার্মানি

এসআইপিআরআই তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল মোট যে পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করেছে তার ৩০ শতাংশ এসেছে জার্মানি থেকে। অর্থাৎ আমেরিকার পরই রয়েছে জার্মানি।

২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে জার্মানি অস্ত্র বিক্রি করেছিল ৩৫১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা করার পর জার্মানি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বাড়িয়ে দেয়।

ডিপিএ নিউজ এজেন্সি বলছে, জার্মানি ইসরায়েলে ৩ হাজার বহনযোগ্য অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র এবং ৫ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। তাছাড়া জার্মানি অস্ত্রের মান উন্নয়ন, মজুদ, রক্ষণাবেক্ষণ মেরামতের জন্য স্থল যান প্রযুক্তি রপ্তানির লাইসেন্স দিয়েছে।

চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কট্টর সমর্থক। তবে সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি তাণ্ডবের বিষয়ে তার সুর কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। জার্মানিতে কিছুটা বিতর্ক উঠেছে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে।

ইতালি

ইতালি ইসরায়েলে তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক। তারা হেলিকপ্টার নৌ আর্টিলারি বিক্রি করে। গত বছর তারা ১৪.৮ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র গোলাবারুদ বিক্রি করে। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ২.১ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদিত দেয় ইতালি।

অন্য দেশ

যুক্তরাজ্য সরকার বলছে,২০২২ সালে তারা ইসরায়েলে মাত্র ৫৩ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। দ্য কাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেড বলছে, ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে মোট ৭২৭ মিয়িলন ডলারের অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স দিয়েছে।

কানাডা সরকার ২০২২ সালে ১৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে। জানুয়ারিতে দেশটি বলেছে, তারা ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন স্থগিত করেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা শিল্প

মার্কিন সহায়তায় ইসরায়েল তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলেছে। বড় আকারের অস্ত্রের বদলে তারা উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রে ফোকাস করে বিশ্বের নবম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে। মনুষ্যবিহীন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দেশটি। গত বছর সেপ্টেম্বর ইসরায়েল থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে অত্যাধুনিক অ্যারো-৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য চুক্তিতে সম্মত হয় জার্মানি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২২ সালে তারা সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। তাদের প্রধান ক্রেতা ভারত (৩৭ শতাংশ), ফিলিপাইন (১২ শতাংশ) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৮.৭ শতাংশ)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন