আমেরিকায় বিভাজন গভীর করছে ক্যাম্পাস বিক্ষোভ
আহমাদ ফারুকি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন অবশেষে ক্যাম্পাস বিক্ষোভ বিষয়ে নীরবতা
ভেঙেছেন। গণতন্ত্র কাজ করার জন্য ভিন্নমত অপরিহার্য ছিল তা স্বীকার করেও
তিনি প্রতিবাদকারীদের তিরস্কার করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিকে প্রেসিডেন্ট
অনাচার বলেও অভিহিত করেন।
তারপর তিনি খোলাসা করে বলেন, গাজায়
ইসরায়েলের আক্রমণের বিষয়ে তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবেন না।
আমেরিকার
১২২টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের
পক্ষে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
চলছে। যেখানে মার্কিন সরকার ইসরায়েলের শক্ত ভিত্তি।
ডেমোক্র্যাটিক
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের
কথায় খুশি হতে পারেননি আরকানসাসের
সিনেটর টম কটন (রিপাবলিকান)। সিনেটর কটন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “ক্যাম্পাসের এই প্রতিবাদকারীরা একদল পাগল, একদল উন্মাদ। তারা ক্যাম্পাসগুলোতে ‘ছোট ছোট গাজা’ তৈরি করেছে। তারা ধর্মান্ধ হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল
অথচ ইহুদি-বিরোধী। এই ঘৃণ্য প্রতিবাদকারীদের ‘সেসপুল’ ছাড়া আর কিছু
বলা যাচ্ছে না।” সেসপুল হচ্ছে ভূগর্ভস্থ ট্যাংকবিশেষ যেখানে স্যানিটারি বর্জ্য নিষ্পত্তি
হয়।
এদিকে প্রতিনিধি
পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন (রিপাবলিকান) ফেডারেল আইনের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত।
এই আন ইহুদি-বিরোধিতাকে অপরাধে পরিণত করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তহবিল বন্ধ করতে
পারবে দেবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বিক্ষোভকে থামাতে পারছে না বা ক্যাম্পাস থেকে
প্রতিবাদকারীদের ক্যাম্প সরিয়ে দিচ্ছে না৷
বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি
বিক্ষোভ ঠেকাতে এবং প্রতিবাদকারীদের ক্যাম্প সরিয়ে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত
রেখেছে। তবু তাদের প্রতি এই দোষারোপ ক্ষত তৈরি করছে। বিভাজনরেখা তৈরি করছে। শাসকশ্রেণি
বিক্ষোভকারীদের ইহুদিবিরোধী বলছে। বস্তুত বিক্ষোভকারীরা ইহুদিবিরোধী না। তারা মূলত
ইসরায়েলি অনাচার ও ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায় বিচার দাবি করছে।
জনসনের প্রস্তাবকে
‘হাস্যকর ও ঘৃণামূলক বিল’ বলে অভিহিত করেছেন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য ম্যাট গেটজ (রিপাবলিকান)।
নিউইয়র্কের
মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ক্যাম্পাস বিক্ষোভ ১৯৭০ সালের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির
স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে, বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে বিক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে।
সে সময় গভর্নর বিক্ষোভ দমন করার জন্য ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘বহিরাগত
দলগুলি বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছিল। তারা আমেরিকায় আশ্রয় দেওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরনের
লোক।’ ন্যাশনাল গার্ড সে সময় চারজনকে হত্যা করেছিল।
অনেক রাজনীতিবিদ
প্রমাণ ছাড়াই বলছেন, বিক্ষোভকারীদের জন্য অর্থ আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে।
জাতিসংঘে
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি সর্বদা জানতেন যে, হামাস গাজার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে
লুকিয়ে রয়েছে। এখন এটা স্পষ্ট যে, হামাস হার্ভার্ড এবং কলম্বিয়াতেও লুকিয়ে আছে।
তিনি এককথায় ক্যাম্পাসের সমস্ত বিক্ষোভকারীর ওপর সন্ত্রাসবাদের লেবেল টেনে দেন।
রাজনীতিবিদদের
এসব বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তির রেখা গভীর করে তুলছে।
কিন্তু মেঘ
গলতে শুরু করেছে। কিছুটা সূর্যের আলো আসতে শুরু করেছে। ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক বিবেককে জাগ্রত করেছে। সিএনএন-এ উপস্থিত হয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক ব্রুস রবিনস, একজন ইহুদি, কিছু কথা বলেছেন। তিনি ‘গাজায় ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ডের
প্রতিবাদকারী ছাত্ররা ইহুদিবাদী/হামাসের সমর্থক’ এমন সব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে তিনি লন্ডন রিভিউ অব বুকস-এ একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে
‘বিশাল মাত্রায় নৃশংসতা’ করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং সে কারণেই আন্তর্জাতিক বিচার
আদালত ইসরায়েল গণহত্যার জন্য দোষী কিনা তা নিয়ে আলোচনা করে।
প্রায় শত বছর আগে ফিলিস্তিনিদের দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিতাড়ন শুরু করে ইসরায়েল। এবং একপর্যায়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনিকে ছোট্ট ভূমি গাজায় বন্দি অবস্থায় রেখেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। ২৩ লাখ সেখানে মানবেতরভাবে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন হামলা চালিয়ে হত্যা-ধর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়া তাদের বাড়িঘর এমনকি কৃষিজমি ধ্বংস করছে তারা। এই সাত মাসে সেখানে মারা গেছে ৩৫ হাজারের ফিলিস্তিনি। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা ও শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দি করলে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। [দ্য ফ্রাইডে টাইমস থেকে অনূদিত]
ড. ফারুকী একজন ইতিহাসপ্রেমী, রিথিংকিং দ্য ন্যাশনাল সিকিউরিটি অব পাকিস্তান-এর লেখক