ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলল দুর্বল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে ম্যাচে ফিরে আরও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে একুয়েডর। এরপর ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়ালে প্রথম শটটিই মিস করেন লিওনেল মেসি। তবে ফের গোলরক্ষক দিবু মার্তিনেসের বীরত্বে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
শুক্রবার সকালে একুয়েডরের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হওয়া পর তা পেনাল্টিতে গড়ায়। এরপর শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে আর্জেন্টিনা।
এদিন ম্যাচজুড়ে দুই দলের আক্রমণেই তেমন ধার খুঁজে পাওয়া যায়নি। বল দখলের লড়াইয়েও দুদল ছিল সমানে সমান (৫১/৪৯)। গোলের জন্য আর্জেন্টিনার আটটি শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে, অপরদিকে ৯টি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখতে পারে একুয়েডর।
শঙ্কা কাটিয়ে মেসির ফেরার দিনে ফাউল করে একুয়েডর ম্যাচ শুরু করার পর দুই দলই সাবধানে খেলা শুরু করে। আক্রমণ বারবার দিক পরিবর্তন করার পর ১৫তম মিনিটে প্রথম শট নেয় একুয়েডর।
মইজেজ কাইসেদোর বাড়ানো পাস বাঁ পাশ থেকে ৬ গজ বক্সের মধ্যে ধরে শট নেন ইয়েরেমি সারমিয়েন্তো। তবে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো (দিবু) মার্তিনেস তা ঠেকিয়ে দেন। পরমুহূর্তে বক্সের ভেতর থেকে কেন্দ্রি পায়েসের শট গোলপোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা এড়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
পরের মিনিটে একুয়েডরের আরও একটি শট পোস্টের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে এই তিনটি শটই নেন ফেলিক্স সানচেজের শিষ্যরা।
এরপর ধীরে ধীরে খেলায় ফেরে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৭তম মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। নাহুয়েল মলিনার ক্রস থেকে হেডারে গোল আদায়ের চেষ্টা করেন ডি বক্সের মাঝমাঝি থাকা এনসো ফের্নান্দেস। তবে তা ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এরপর ৩৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা। ৩৪তম মিনিটে মেসির বাড়ানো পাস থেকে বক্সের ভেতর থেকে শট নেন এনসো, কিন্তু তার শটটি রক্ষণে প্রতিহত হলে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে আসা ক্রসে মাথা লাগিয়ে দূরের পোস্টের দিকে বল ঠেলে দেন আলেক্সিস মাক আলেস্তার। এরপর বাঁ পাশে ছয় গজ বক্সের মধ্যে থাকা লিসান্দ্রো মার্তিনেস লাফিয়ে উঠে বল জালিয়ে জড়িয়ে দেন।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে এটিই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডারের প্রথম গোল। আর চলতি কোপার আসরে প্রথমার্ধে এই প্রথম গোল পেল আর্জেন্টিনা।
এরপর কোনো পাশে আর তেমন সুযোগ তৈরি করতে না পেরে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরে আর্জেন্টিনা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। এর সুযোগ নিয়ে চ্যাম্পিয়নদের চেপে ধরার চেষ্টা করে একুয়েডর।
তবে প্রথম সুযোগটা আসে আর্জেন্টিনারই। দিবুর লম্বা ফ্রি কিক বক্সের মধ্যে ফাঁকায় পেয়ে যান লাউতারো মার্তিনেস। এরপর বুক দিয়ে বল নামিয়ে বাঁ পায়ে শট নিলেও তা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইন্টার মিলানের এই ফরোয়ার্ড।
এরপর ম্যাচে ফেরার সবচেয়ে বড় সুযোগটি আসে একুয়েডরের সামনে। ৬০তম মিনিটে পেনাল্টি পায় তারা।
বক্সের মধ্যে একুয়েডরের গোলে নেওয়া শট রদ্রিগো দে পলের কনুইতে লাগলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। তবে স্পট কিক থেকে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হন একুয়েডর অধিনায়ক এনার ভালেন্সিয়া। দিবু মার্তিনেসকে ভুল দিকে পাঠালেও ভালেন্সিয়ার মাটি কামড়ানো শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফলে এগিয়েই থাকে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে আরও একটি গোলের সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। তবে বক্সের মধ্যে বাঁ দিক থেকে মেসির নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন একুয়েডর গোলরক্ষক।
৭৩তম মিনিটে গোলমুখ থেকে আর্জেন্টিনার আক্রমণ নিষ্ক্রিয় করে পাল্টা আক্রমণে ওঠে একুয়েডর। গোলের ভালো সম্ভাবনাও তৈরি করে তারা, কিন্তু সেসময় তাদের পরপর তিনটি প্রচেষ্টা আর্জেন্টিনার রক্ষণে বাধা পায়।
এরপর দুই দলের কেউই আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারলে শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের খেলা। তবে খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আর গোল পেয়ে যায় একুয়েডর।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই বাঁ পাশে বক্সের কয়েক মিটার বাইরে থেকে দূরের পোস্ট লক্ষ্য করে জোরালো শট নেন জন ইয়েবোয়া। তার উড়ন্ত শট বক্সের ভেতর থেকে দারুণ এক হেডারে গোলে পরিণত করেন বদলি নামা কেভিন রদ্রিগেজ। ফলে ম্যাচের মাত্র ৪ মিনিট বাকি থাকতে সমতায় ফেরে একুয়েডর। কোপা আমিকার চলতি আসরে এটিই আর্জেন্টিনার জালে প্রতিপক্ষের প্রথম গোল।
যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বুক কাঁপিয়ে দেয় একুয়েডর। প্রতিপক্ষের একটি ভালো প্রচেষ্টা আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা রুখে দেওয়ার পরপরই বাঁ পাশে বক্সের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান একুয়েডরের আলান মিন্দা, ৬ গজ বক্সের সামান্য বাইরে থেকে তাতে মাথাও লাগান বদলি নামা স্ট্রাইকার জর্দি কাইসেদো, কিন্তু বল পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেলে শেষ মুহূর্তে ম্যাচ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের। এরপরই পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় ম্যাচ।
কনমেবলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফাইনাল ছাড়া নকআউট পর্বের অন্য ম্যাচগুলোতে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিট রাখা হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ের খেলা সমতায় শেষ হলে সরাসরি পেনাল্টিতে গড়াবে ম্যাচ।
শুটআউটে মেসির নেওয়া প্রথম শটটিই মিস হয়। গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে পানেনকা পেনাল্টি শট নেন তিনি, কিন্তু বল ওপরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফলে হতাশ হয় আর্জেন্টিনার সমর্থকরা।
তবে এরপরই জ্বলে ওঠেন দিবু মার্তিনেস। বাঁ পাশে ঝাঁপিয়ে আনহেল মেনার প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ডান পাশে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন আলান মিন্দার শটটিও।
মাঝে হুলিয়ান আলভারেস ভুল না করলে পিছিয়ে পড়েও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এরপর মাক আলিস্তের, গনসালো মন্তিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দি সঠিক পরিমাপের তিনটি শট নিলে ৪-২ ব্যবধানে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
আগামী বুধবার (১০ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় ভেনিজুয়েলা-কানাডা ম্যাচজয়ীদের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে লিওনেল মেসির দল।