Logo
Logo
×

সবিশেষ

গবেষণা

খাবার থেকে আসা ‘রক্তের সুগার স্পাইক’ বাড়াতে পারে উদ্বেগ, হতাশা

Icon

মেরি স্কোরবুটাকোস

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ পিএম

খাবার থেকে আসা ‘রক্তের সুগার স্পাইক’ বাড়াতে পারে উদ্বেগ, হতাশা

প্রবাদ আছে, মিষ্টি খাবার মেজাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উল্টো দিকে, ক্ষুধার্ত বোধ করার মতো অনুভূতি রাগ বা বিরক্তির আকারে প্রকাশ পায়।

এর মানে, আমরা কী খাই বা খাই না তাও নেতিবাচক আবেগকে উস্কে দিতে পারে।

সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা কী খাই এবং আমরা কেমন অনুভব করি এই দুইয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে আমাদের খাবার। অর্থাৎ খাবারের কারণে রক্তে শর্করার ওঠানামা আমাদের মেজাজের জন্য আংশিকভাবে দায়ী। খাবারের কারণে আমাদের হরমোন এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়ে, যা উদ্বেগ ও বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্য একটি জটিল বিষয়। অগণিত সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণ রয়েছে যা শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, খাদ্য হল একটি জৈবিক কারণ যা বিষণ্নতা ও উদ্বেগের লক্ষণগুলির জন্য দায়ী। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে খাবার।

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় পুষ্টিসহ সব ধরনের কারণ বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

ভূমধ্যসাগরীয় খাবার (হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স)

অনেক গবেষণা রয়েছে যেখানে দেখা গেছে, খাদ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র গভীর। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য যার তালিকায় রয়েছে প্রচুর শাকসবজি, বিশেষ করে গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, ফল, জলপাই তেল, আস্ত শস্য, লেবু, বাদাম, অল্প পরিমাণ মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত দ্রব্য। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের অনেক গুণাবলির মধ্যে একটি হল—এই খাবার মেজাজের উপর প্রভাবের জন্য দায়ী।

এসব খাবার রক্তে শর্করা বাড়ায়। আর রক্তে শর্করার ওঠানামা মেজাজকে প্রভাবিত করে। এগুলো রক্তে শর্করার তীব্র স্পাইক তৈরি করে যা বিষণ্নতার ঝুঁকি ও উদ্বেগের সাথে যুক্ত। এই খাবারের মধ্যে রয়েছে সাদা ভাত, সাদা রুটি, ক্র্যাকার ও বেকড পণ্য। এই খাবারগুলি হতাশা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

অপরদিকে, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন পার্বোল্ড রাইস এবং আল ডেন্টে পাস্তা, যা ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং রক্তে শর্করার একটি ছোট স্পাইক তৈরি করে, যা ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত। 

ডায়েট কিভাবে মেজাজকে প্রভাবিত করে

খাদ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগ ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া রয়েছে। একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হল, আমাদের হরমোনের উপর খাদ্যের প্রভাব। এবং হরমোনের সঙ্গে মেজাজের সম্পর্ক এবং হরমোনের সঙ্গে রক্তে শর্করার ওঠানামার সম্পর্ক।

যতবারই আমরা চিনি বা কার্বোহাইড্রেট যেমন রুটি, ভাত, পাস্তা, আলু এবং ক্র্যাকার খাই, ততবারই রক্তে শর্করার বৃদ্ধি করে যা হরমোন সংকেত উস্কে দেয়। একটি উদাহরণ, ডোপামিন হল আমাদের মস্তিষ্কের আনন্দ সংকেত যা আসে মিষ্টি বা বেকড পণ্য খাওয়ার পর।

ইনসুলিন হল আরেকটি হরমোন যা কার্বোহাইড্রেট ও চিনি থেকে সরাসরি বেশি আসে। ইনসুলিনের কাজ হল আমাদের কোষ ও টিস্যুতে গৃহীত শর্করাকে বহন করে রক্তের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো যায় এবং এটি শক্তির জন্য ব্যবহার করা যায়। যখন আমরা খুব বেশি চিনি, অনেক বেশি কার্বোহাইড্রেট বা উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেট খাই তখন রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি হয় যা ইনসুলিনের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। হরমোন যথাযথভাবে রক্তের শর্করাকে যথাযথ স্তরে পুনরুদ্ধার করতে রক্তে গ্লুকোজ পাঠায়। এটি আমাদের অনুভূতিকেও প্রভাবিত করে। 

মজার বিষয় হল, চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে হরমোনের বৃদ্ধি হয় খুব শিগগিরই। তাই এগুলো খাওয়ার সময় হরমোন আমাদের স্বল্পমেয়াদে ভাল অনুভব করায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে খারাপ বোধ করাতে পারে। অর্থাৎ সব সময় মিষ্টি খাইলেই সব সময় মন ভাল থাকবে তা না।

একই খাবার কি সবার বেলায় একইভাবে কাজ করে? 

একই খাবারে সবাই সমানভাবে প্রভাবিত হয় না। একই খাবার বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পৃথকভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। লিঙ্গভেদে, সেই সাথে জেনেটিক্স, সেডেন্টারিনেস এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের উপর নির্ভর করে।

মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, মানসিক স্বাস্থ্য একটি জটিল বিষয়। তাই নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একটি খাদ্য সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলিকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

খাবারের অভ্যাস ও রুচির ওপর ভিত্তি করে একটি খাদ্য অবশ্যই একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলারা বিশেষ করে খাদ্যের প্রভাবের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।

গবেষণায় দেখা গেছে, সমস্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে কৃত্রিম মিষ্টি এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি মিষ্টি পানীয় হতাশার সাথে সবচেয়ে জোরালোভাবে যুক্ত।

মেজাজ ও খাবার

রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট উপায় হল চিনি ও কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমানো। রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা এবং মেজাজ অপ্টিমাইজ করার কৌশলর মধ্যে রয়েছে:

দিনের শুরুতে কার্বোহাইড্রেট খান যেমন সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের সময়। আমাদের হরমোনগুলি একটি সার্কাডিয়ান ছন্দ অনুসরণ করে। সেখানে দিনের শুরুতে খাওয়া কার্বোহাইড্রেট পরে খাওয়া কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় একটি ছোট স্পাইক তৈরি করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর।

ক্র্যাকার বা ভাতের সাথে—কার্বোহাইড্রেটের সাথে—প্রোটিন যেমন মটরশুঁটি, বাদাম, মাংস ও মাছ বা অলিভ অয়েল এবং অ্যাভোকাডোর মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি কল্যাণকর। এসব পুষ্টির সংমিশ্রণ কার্বোহাইড্রেটের হজমকে ধীর করে দেয় এবং এর ফলে রক্তে শর্করার একটি ছোট স্পাইক তৈরি করে।

খাবারের শেষ দিকে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া ভাল। অর্থাৎ প্রথমে শাকসবজি এবং প্রোটিন খাওয়ার পর ভাত/রুটি। 

কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার আগে জলপাই তেল ও ভিনেগার দিয়ে মাখানো সালাদ খাওয়া আরও ভাল। শাকসবজির সংমিশ্রণ, ভিনেগার থেকে অ্যাসিড এবং জলপাই তেল থেকে চর্বি, সমস্ত কার্বোহাইড্রেট শোষণকে ধীর করে। ফলস্বরূপ, রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কমাতে একসাথে কাজ করে এগুলো।

[স্ক্রল ডট ইন থেকে সংক্ষেপিত]

মেরি স্কোরবুটাকোস, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, পূর্ব ভার্জিনিয়া মেডিকেল স্কুল।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন