থাকতেন ফুটপাতে, চাকরি পেলেন মাইক্রোসফটে
কেমন ছিল মুম্বাই তরুণীর সংগ্রাম
অনেকেরই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন থাকে। মুম্বাইয়ের তরুণী শাহিনারও তাই। তাকে ঘুমাতে হত ফুটপাতে, কিন্তু মন উড়ে বেড়াত আকাশে। যে শহরের ফুটপাথে ঘুমিয়ে স্বপ্ন বুনতেন, এখন সেই শহরে একটি বহুতলে থাকেন তিনি।
মুম্বাইয়ের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুম্বাইয়ের বান্দ্রা রেলস্টেশনের কাছে একটি ঘিঞ্জি এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন শাহিনা আতরওয়ালা। রাস্তাঘাটে চুড়ি বিক্রি করতেন তার বাবা। ছোট ঘর হলেও মাথার ওপর ছাদ ছিল সে সময়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহিনার বাবা। চুড়ি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায় তার।
কন্যাকে অনেক কষ্টে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন এই বাবা। কন্যার ইচ্ছাপূরণের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রেও ভর্তি করিয়েছিলেন। অর্থাভাবে মাঝপথে কম্পিউটার শেখা বন্ধ হয়ে যায় শাহিনার। মাথার ওপর থেকে ছাদও সরে যায়। পরিবারটি ঠাঁই হয় ফুটপাতে। ফুটপাতেই সংসার গড়ে তোলেন তারা।
শাহিনা দমে যাননি। স্কুলে তো যানই, পাশাপাশি টাকা বাঁচাতে শুরু করেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রতিদিন একবেলা খাবার না খেয়ে থাকতেন শাহিনা। আর স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য বাসের বদলে দুটি পা। এই দুইটাই তার সঞ্চয়। তাই দিয়ে আবার কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হন শাহিনা।
বাবাও নতুন করে আরও সংগ্রামী হয়ে ওঠেন। কন্যার জন্য একটা পুরনো কম্পিউটার কেনেন। সে জন্য অবশ্য বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করেন তিনি।
স্কুলের পাট চুকিয়ে মুম্বাইয়ের একটি কলেজে ভর্তি হন শাহিনা। সেখান থেকে বিকম ডিগ্রি। তারপর এনআইআইটিতে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি) ভর্তি। ভিজুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন শাহিনা। বেঙ্গালুরুতে একটি স্কুটারের কাঠামো তৈরি করে দেখান তিনি। সেটাই তাকে রাতারাতি পরিচিত করে তোলে।
একাধিক জনপ্রিয় সংস্থা ডিজাইনিংয়ের জন্য যোগাযোগ করে তার সঙ্গে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিথি হয়ে পড়ুয়াদের ডিজাইনিং প্রশিক্ষণ দেন শাহিনা।
অনেক নামী প্রতিষ্ঠানের চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন শাহিনা। শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফটে চাকরি করার সিদ্ধান্ত। এখন তিনি সেখানেই আছেন। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ডিজাইন ম্যানেজার।
২০২১ সালে মুম্বাইয়ে নিজের ফ্ল্যাট কেনেন শাহিনা।
সমাজমাধ্যমে নিজের জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রায়ই পোস্ট করেন এই তরুণী। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘ফুটপাতের জীবন বড়ই কঠিন। লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। যৌন হেনস্তার শিকার পর্যন্ত হতে হয়েছে। আমি হার মানিনি। আমি শুধু ভাবতাম, নিজের জন্য অন্য একটা জীবন তৈরি করতে হবে।’
অভাবের সংসারে যেসব কিশোরী মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয় তাদের দায়িত্ব নিতে একটি সংস্থা খুলেছেন শাহিনা। তিনি নিজে যে পথে একা লড়াই করেছেন, অন্য মেয়েরা যেন সেই পথে হেঁটেও স্বপ্ন পূরণ করতে পারে সেজন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সবার শুভাকাঙ্ক্ষী।