Logo
Logo
×

সবিশেষ

শিশুদের জন্য: কেমন ছিল পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শৈশব

Icon

স্বাতী সেনগুপ্ত

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

শিশুদের জন্য: কেমন ছিল পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শৈশব

সুরেন্দ্রনাথ বসু বাজার থেকে মাছ আর সবজি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি শিশুর মতো উত্তেজনায় ভরে উঠলেন। তার ছেলে সত্যেন কী করছে তা দেখার জন্য তিনি অপেক্ষা করতে পারেননি। বাড়িতে পৌঁছেই তিনি দ্রুত কাপড় বদলে ছেলেকে দেখতে ছুটে যান। তিনি রুমের দরজাটা একটু খুলে ভিতরে উঁকি দিলেন।

চার বছরের ছোট্ট ছেলেটি তখন সংখ্যার সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল, সাবান, চিনি, লবণ, পুরনো বিছানা, বালিশ ও অন্যান্য পুরানো কাপড়ের স্তূপের মধ্যে বসে ছিল ছেলে তখন। হাফপ্যান্ট ও হাতাকাটা গেঞ্জি পরা ছেলেটি সংখ্যাসমুদ্রের উপর সবিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল। তার হাতের চক থেকে অঙ্ক গণিতের চিহ্ন লাল মেঝেতে ঝরে ঝরে পড়ছিল আর সেদিকে চোখ দুটি চকচক করছিল।

বিস্ময়কর!’ সুরেন্দ্রনাথ অনন্দ-উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলেন,তুমি সবকিছু ঠিক ঠিক পেরেছ! এটা কি কঠিন ছিল?

ছোট্ট সত্যেন হাসল।গণিত কঠিন নয়, বাবা। পরেরবার আপনি যখন বাইরে যাবেন, তখন আমাকে সত্যি সত্যিই কিছু কঠিন অঙ্ক দিয়ে যাবেন। আমি সেগুলো খুব দ্রুত শেষ করব।’ সে উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘দেখেন, বাবা! লাল মেঝেটি দেখতে একটি পুকুরের মতো। সংখ্যা ও গণিতের প্রতীকগুলি পুকুরে সাঁতার কাটছে বলে মনে হচ্ছে!’

সত্যেন, যার আদুরে নাম ছিল বদি, দেবতা বৈদ্যনাথের নামানুসারে, সংখ্যার প্রতি যার বিশেষ ভালোবাসা ছিল। সুরেন্দ্রনাথ যখনই কোনো কাজে বাড়ি থেকে বের হতেন তখনই তিনি ছেলেকে গণিতের কিছু সমস্যা সমাধান করতে দিতেন। প্রায়ই তিনি ছোট্ট সত্যেনকে ঘরের মেঝেতে অঙ্ক করতে বলতেন। মেঝেতে অঙ্ক কষা মজাদার উদ্ভাবনী মনে করতেন সুরেন্দ্রনাথ। খাতায় অঙ্ক করাটা হবে অধ্যয়ন, কিন্তু মেঝেতে সেই একই অঙ্ক করাটা খেলার মতো মনে করবে ছেলে। ছেলেকে নিয়ে গর্বিত সুরেন্দ্রনাথ ছেলের জন্য নতুন কিছু করতে গিয়ে ঘরের মেঝেকেই বেছে নেন। এ এমন এক ছেলে যাকে নিয়ে বাবার গর্বিত হবারই কথা। যেমন, সে এত দ্রুতগতিতে গণিত শিখছিল যে, নতুন কিছু শেখার নেই বলে সে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল।

বাবা সুরেন্দ্রনাথ ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়েতে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। একের পর এক কাঁধে আসা দায়িত্ব নিয়ে তাকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবু সাহিত্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি ভাল পড়াশোনা ছিল। ১৯০১ সালে তিনি একজন অংশীদারের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

সত্যেনের পর এই দম্পতির আরও ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। তাদের সবাই মেয়ে। পরিবারটি অবশেষে কলকাতার ঈশ্বর মিল লেনের বাড়িতে চলে আসে। সত্যেন নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন।

যত দিন যায়, সুরেন্দ্রনাথ তার ছেলের অস্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা গণিত প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন। তিনি নিজেও একসময় শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারিবারিক দায়িত্বের কারণে তা করতে পারেননি।

সত্যেনের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল ছিল, কিন্তু তিনি এই অসুবিধাটি কাটিয়ে ওঠেন সহজেই। কারণ তিনি যা একবার পড়তেন বা দেখতেন তা মনে রাখতে পারতেন। তিনি খুব বিরক্ত হতেন যদি তাকে কঠিন বা একেবারে নতুন অঙ্ক না দেওয়া হতো। তার বাবা-মা প্রায়ই ভাবতেন যে তারা ছেলের সঠিক প্রয়োজন মেটাতে পারবেন কিনা। পরে ছেলেকে হিন্দু স্কুলে ভর্তি করালে দুশ্চিন্তা কেটে যায়। কারন এখানে সত্যেন সেরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ালেখা করবেন। উপযুক্ত প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন যা তাকে আরও ভাল করতে উৎসাহিত করবে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯০৭ সালে হিন্দু স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ভাগ্যবান ছিলেন যে তার বাবা-মা তাকে সঠিক জায়গায় ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন।

ছোট সত্যেন বা সত্যেন্দ্রনাথ বসু কলকাতায় তাদের বাড়ির কাছে নরমাল স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৮৯৪ সালের জানুয়ারি তার জন্ম। সুরেন্দ্রনাথ আমোদিনীর জ্যেষ্ঠ সন্তান।

(স্ক্রল ডট ইন থেকে অনুবাদ)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন