রয়টার্সকে বিএনপি
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে

ড. মঈন খান। ছবি: রয়টার্স
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশসহ জনগণের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। ২০২৬ সাল পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত থাকতে পারে- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পরই বিএনপির পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা এলো।
আজ সোমবার (৩১ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে তার অন্যতম মিত্র দেশ ভারতের নয়াদিল্লি পালিয়ে যান।
বাংলাদেশের বড় দুটি প্রধান দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ চাইছে এ বছরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু গত মঙ্গলবার ড. ইউনূসের দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেছেন, কিছুটা সময় নিয়ে নির্বাচন করলে সংস্কারের সুযোগ পাওয়া যাবে এবং এতে নির্বাচন অধিক বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে বিএনপি এবং পশ্চিমা কিছু দেশ। যা শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে।
সম্প্রতি ইউনূস সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা ও ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, চলতি বছর নির্বাচন আয়োজন কঠিন। কারণ পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভালো অবস্থানে নেই।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারনী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা চাই এ বছরই গণতন্ত্র ফিরে আসুক। গত শনিবার (২৯ মার্চ) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে বুঝানোর চেষ্টা করছি, দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই তাদের জন্য উত্তম পন্থা। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সম্মানজনকভাবে প্রস্থানের সুযোগ পাবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য একটি সময়সীমা। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন পিছিয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা চলছে, যাতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা যায়।
বিএনপির এই নেতা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে হয়তো পরিস্থিতি অস্থিতিশীল... সময়ই বলে দেবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ মূলত ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (জাতীয় নাগরিক দল)। ছাত্র নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতি নিয়ে বিরক্ত। এজন্য তারা পরিবর্তন চায়।
তবে মঈন খান বলেছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ জরিপে দেখা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচন হলে বিএনপি সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন।
গত কয়েক মাসে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বেশ কয়েকটি মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছে আদালত। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস এবং হার্টের সমস্যা নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। বাংলাদেশে থাকাকালীন তিনি যে অবস্থায় ছিলেন, তার চেয়ে এখন অনেকটা ভালো আছেন।
যদিও মঈন খান বলেছেন, খালেদা জিয়া সম্ভবত আর সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন না।
জোট প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা বিএনপির নেই। তবে বিএনপি এককভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অন্যান্য দলের সঙ্গে কাজ করবে। যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
মঈন খান বলেন, নির্বাচনের পর, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা সকলের সঙ্গে সরকার গঠন করতে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না।