ভোট নিয়ে জরিপ
এখন নির্বাচন হলে কোন দল কত ভোট পাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৫১ পিএম

এই মুহূর্তে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এগিয়ে থাকবে। মাঠ পর্যায়ে চালানো এক জনমত জরিপে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। জরিপে সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিএনপি। আর বিএনপির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ভোট পাবে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ।
আজ শনিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে জরিপকারী সংস্থা ইনোভিশন কনসাল্টিং। বাংলাদেশ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এই সংস্থাটি চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপটি চালায়। জরিপে ভোটারদের অনুভূতি, প্রত্যাশা এবং পছন্দ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে আসে।
সংস্থাটি জানায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩৪.৩ শতাংশ) ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা জানাতে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ কাকে ভোট দেবেন সেই প্রসঙ্গে মতামত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার। মতামত দেননি ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার।
কাকে ভোট দেবেন এই প্রশ্নে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটারের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিএনপির পক্ষে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে পড়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট, ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলের পক্ষে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং অন্যান্য দলের পক্ষে গেছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট।
এদিকে, জরিপে বিভাগ ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণেও দেশের ৮টি বিভাগের ৬টিতেই সম্ভাব্য ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি এগিয়ে। দুটিতে এগিয়ে আছে জামায়াত।
বিভাগ ভিত্তিক জরিপে দেখা যায়, বরিশালে ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, ঢাকায় ৪৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৫১ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছে বিএনপি।
অন্যদিকে, খুলনায় ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৪৪ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছে জামায়াত।
সংস্থাটি জানায়, জরিপের ফলাফল থেকে বোঝা যায় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি এগিয়ে ও জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ছাত্র নেতৃত্বাধীন দল এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোও কিছু ভোটার আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা জানাতে অস্বীকার করেছেন, তাদরে সিদ্ধান্তও ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এবং নির্বাচনী প্রচারণার গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে যা শেষ মুহূর্তে ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়া জরিপে দেখা যায়, ছাত্র সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বেশি ভোট শেয়ার রয়েছে চট্টগ্রামে (৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ)। ছাত্র সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দলের ভোটের হার গ্রামাঞ্চলের তুলনায় (৪ দশমিক ১ শতাংশ) শহরাঞ্চলে বেশি (৮ দশমিক ৯ শতাংশ)।
অন্যদিকে, শহরাঞ্চলের (৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ) তুলনায় বিএনপির গ্রামাঞ্চলে (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) ভোট বেশি। একইভাবে শহরাঞ্চলের তুলনায় (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) গ্রামাঞ্চলে জামায়াতের ভোটের হার বেশি (৩১ দশমিক ৯ শতাংশ)। আর
যারা বিএনপিকে ভোট দেবেন তাদের মধ্যে জেন জি (১৮-২৮ বছর) ভোটের ভাগ সর্বনিম্ন (৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জেন এক্স (৪৫-৬০ বছর) ভোটের ভাগ সর্বোচ্চ (৪৭ শতাংশ)।
যারা জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন তাদের মধ্যে জেন জি ভোটের ভাগ সর্বোচ্চ (৩৪ দশমিক ২ শতাংশ), তারপর মিলেনিয়াল (২৯-৪৪ বছর) ভোটের ভাগ (৩১ দশমিক ২ শতাংশ); যারা ছাত্র সমর্থিত নতুন দলকে ভোট দেবেন তাদের মধ্যে জেন জি ভোটের ভাগ সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১ শতাংশ। তারপর মিলেনিয়াল ভোটের ভাগ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
জরিপে দেখা যায়, যারা ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি তাদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছেন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের প্রার্থীকে জানা প্রয়োজন; ৯ দশমিক ৭ শতাংশ মূলধারার দলগুলির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করছে তারা জানেন না তাদের প্রিয় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা, ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করছেন তারা কোনো বিকল্প রাজনৈতিক দল দেখতে পাচ্ছেন না।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, ভোট কাকে দেবেন সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন পরিবারের সদস্যদের দ্বারা তারা প্রভাবিত হন। প্রতিবেশীদের দ্বারা প্রভাবিত হন ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবরের ক্ষেত্রে টেলিভিশন সংবাদ ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, ইউটিউব বা ফেসবুক বা টিকটক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও ৫ দশমিক ০০ শতাংশ, সংবাদপত্র/অনলাইন সংবাদপত্র ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোটার। আর নতুন ভোটার এবং যারা গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দেননি, তাদের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদির মাধ্য ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রভাবিত হন।
জরিপে দেখা যায়, গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের কোনোটিতেই ভোট দেননি ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার। গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের অন্তত একটিতে ভোট দিয়েছেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার।
কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। ৬২ দশমিক ০ শতাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাকে ভোট দেবেন। মন্তব্য করেনি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
অনেক ভোটার এখনো অনিশ্চিত এবং তারা দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে প্রার্থীর যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচার এবং জনগণের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এ এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে মনে করছে জরিপকারী সংস্থা।
উল্লেখ্য, ইনোভিশন কনসাল্টিং বাংলাদেশ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা। সংস্থাটি গত ১৬ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এছাড়া, সামাজিক ও বাজার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উপরও সংস্থাটি গবেষণা করে আসছে। সংস্থাটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়েও কাজ করে।
সংস্থাটি চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপটি চালায়। জরিপে ভোটারদের অনুভূতি, প্রত্যাশা এবং পছন্দ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে আসে। জরিপে দেশের ৮ বিভাগ ও ৬৪ জেলা জুড়ে ১০ হাজার ৬৯৬ জন সম্ভাব্য ভোটারের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়।-