সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সালাউদ্দিন
পাঁচ মাস পরে জুলাই ঘোষণাপত্রের আদৌ দরকার আছে কি না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা আমাদের সবচেয়ে জরুরি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, তা গণঐক্যে রূপান্তরিত করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে যেন চর্চা করতে পারি এবং ঐক্য ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিতে পারি, তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছে তা যেন বিনষ্ট না হয়, ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছিলেন, আমরা এসেছি, রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে মতামত-পরামর্শ যা দেয়া দরকার তা দিয়েছি।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক থেকে বের হয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি কী পরামর্শ বা মতামত দিয়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিভিন্ন দল আলোচনা করেছে, পরামর্শ দিয়েছে। আমরা প্রশ্ন করেছি, সাড়ে পাঁচ মাস পর আসলেই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দরকার ছিল কি না? যদি দরকার থাকে, সেটার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কী— সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যাতে ফাটল না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কোনো রাজনৈতিক দলিল ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়, সেটিকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু সেটি প্রণয়ন করতে গিয়ে যাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, পরামর্শ নেয়া হয়, সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের অনুরোধ করেছি। যাতে আমাদের মধ্যে ঐক্যে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়, বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেগুলো আলাপ হয়েছে।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক হয়।
বৈটকের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ঐক্যবদ্ধভাবে দেওয়া গেলে সবার মনে সাহসের সঞ্চার হবে এবং দেশ চমকে উঠবে। অন্যথায় এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাহলে ঘোষণাপত্র দেওয়ার আর দরকার নেই। আমরা কাজ করার সময় দেখি একা পড়ে গেছি। তখন নিজেদের দুর্বল মনে হয়। আপনাদের সাথে দেখা হলে মনে সাহস পাই। এই একতার মধ্যেই আমাদের জন্ম ও একতাই আমাদের শক্তি।
প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে বলেন, হঠাৎ ছাত্ররা এসে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বললো। তখন আমি সবাইকে নিয়ে ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা বললাম। কারণ এর জন্য ৫ আগস্টকে রিক্রিয়েট করতে হবে। আর সবাইকে ছাড়া তা সম্ভব নয়। অন্যথায় ৫ আগস্টকে অবমাননা করা হবে। ছাত্ররা আমার এই কথায় খুশি হয়নি। যদিও পরে তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এরপর থেকেই একসাথে কীভাবে এটি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণাপত্র দেয়া গেলে দেশের জন্য ভালো হবে। এছাড়া, আন্তজার্তিকভাবেও এটি অনেক গুরুত্ববহণ করবে। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসী ও বিশ্বকে আমরা ঐক্যের বার্তা দিতে চাই।
উল্লেখ্য, আজ রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ।
এছাড়াও আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক।
এছাড়াও আছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসনাত কাইয়ূম। এরপর আছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঢুকতে দেখা গেছে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপনকে।
বৈঠকে যোগ দিতে হাজির হয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল ও মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ।
উল্লেখ্য, বৈঠক শুরুর আগে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।