ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি দেশের পক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। এই সভায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। 

তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল। ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখন কিন্তু আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সুতরাং ৫ আগস্টের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।

তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী, স্বাধীন এবং কার্যকর থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনো স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের আদালতের অর্থ কিন্তু বিচারিক আদালত কিংবা মব জাস্টিস নয়। জনগণের আদালতের অর্থ কোনো ব্যক্তি তার দলকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, চূড়ান্ত ক্ষমতা হাতে ন্যস্ত থাকা। জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রসিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দায়ভারও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। 

তারেক রহমান আরও বলেন, জনগণ নিজেরাই তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ে আড়ালে থাকা মাফিয়া চক্রকে প্রত্যাখ্যান করবে। যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে রাষ্ট্রীয় আদালতে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের ভার রাজনীতির মাঠে, অর্থাৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের আদালতে হওয়ার সংস্কৃতি চালু করা গেলে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতার যথানিয়মে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। সুতরাং বিএনপির সকল নেতা-কর্মীকে বলতে চাই, জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। 

তারেক রহমান বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। তবে প্রত্যেক নেতা-কর্মীর মধ্যে বিজয়ের আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেদের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন না। জনগণের কাছে পছন্দ নয়, এমন কোনো কাজ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন। কারণ জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনপ্রত্যাশার বিচারে ১৯৭১ সাল, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট-প্রতিটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।   

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে আমদানিনির্ভর, পরনির্ভর এবং ঋণনির্ভর একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করে মাফিয়া সরকারের প্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক স্বৈরাচারের ১৫ বছরের দুঃশাসনের কুফল এখনো জনগণকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট পলাতক স্বৈরাচারের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে বাংলাদেশের আবহমানকালের ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। নতুন সত্তা পেয়েছিল। নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।