নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি, কেমন চলছে কার্যক্রম
অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সারা দেশে চলছে তাদের ব্যাপক তোড়জোড়।
একদিকে সরাসরি জনসংযোগ আরেক দিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ এলাকায় দলের প্রতিটি ইউনিট পুনর্গঠন করে চলেছেন। কেন্দ্র থেকেও দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা।
বিএনপি তাদের সমমনা দলগুলোকে সহযোগিতা করবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় প্রার্থী এবং বিশেষ করে ছাত্রদল থেকে আসা নেতারা প্রাধান্য পাবেন। এর বাইরে সাবেক এমপিদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারা প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় থাকার ইঙ্গিত পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই আমাদের ছিল। তবে সময়ে সময়ে এর নানাদিক আপডেট কিংবা কিছু পরিবর্তন হয়। সেগুলো আমরা করছি।”
শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে দলটি অংশ নেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হয়ে। ২০১৪ সালেও নির্বাচন বর্জন করে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচনায় রেখে দলের কার্যক্রম এগোচ্ছে। তিনি বলেন, “দলের চেয়ারম্যান বলেছেন, নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবাইকে সাথে নিয়ে অর্থাৎ জাতীয় সরকার করে দেশ পরিচালনা করা হবে। যেসব দল আন্তরিকভাবে বিএনপির সাথে ছিল তারাও সেই সরকারে থাকবে। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিবেচনায় থাকবে।”
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দেশজুড়ে বিএনপির বেশির ভাগ কমিটি হয়েছে ঢাকা থেকে। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর থেকে দলের নেতারা মামলা-হামলাসহ নানা কারণে এলাকায় অনিয়মিত ছিলেন।
গত ৫ অগাস্টে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসার পর থেকে দেশজুড়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে হাইকমান্ড। এরই মধ্যে মাগুরা ও কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলা কমিটি বাতিল করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝেই বাতিল বা বিলুপ্ত করার খবর আসে গণমাধ্যমে।
প্রায় ৯ বছর পর কমিটি হয়েছে বরগুনায়। বিলুপ্ত করা হয়েছে খুলনার আহ্বায়ক কমিটি। কাজ চলছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন কমিটি নিয়ে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “গত ১৫ বছরে আমরা কোনো এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারিনি। এখন প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ইউনিটিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবে দল।”
বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল সারাদেশে যৌথভাবে প্রতিটি জেলায় যৌথ কর্মী সভা করছে, যার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমানের নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া।
তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জেলা পর্যায় সফর করে এসব সমাবেশ সমন্বয় করছেন। ফলে মাঠপর্যায়ে তরুণ নেতাকর্মীরা তাদের করণীয় সম্পর্কে বার্তা পাচ্ছেন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রেজাউর রহমান বলছেন, তার এলাকায় বিএনপির সাবেক এমপি নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “গত ১০ বছর আমাদের দলের সাবেক এমপি এলাকায় আসতে পারেননি। ঢাকায় তার সাথে দেখা করতে যাওয়ার অপরাধে আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। এবার ৮ অগাস্ট তিনি এলাকায় এসেছেন। বন্যা ও পূজার সময় নিজে এলাকায় থেকে কাজ করেছেন। তিনি থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুরো এলাকায় জনসংযোগ ও দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তিনি।”
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলছেন, “বিএনপির সাবেক এমপি বা মন্ত্রীরা কেউই গত ১০ বছর তাদের এলাকায় গিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি। হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েছে। এখনো অনেকে জেলে। প্রতিটি এলাকায় নেতাদের মামলার জট থেকে বের করে আনার কাজ চলছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের নেতারা যার যার এলাকায় ব্যাপক রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিগুলোতে জনগণের পাশে থাকছেন। প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ইউনিট এতে সক্রিয় থাকছে।”
কারা প্রাধান্য পাচ্ছে
যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ভবিষ্যতের জন্য দলীয় হাইকমান্ড প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদের, যারা নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তবে যারা যৌক্তিক কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারা বিবেচনায় আসবেন কি না সেটা দল আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, “নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, তৃণমূল কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সমস্যা দেখতে হবে এবং জনগণের সাথে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। দল দেখছে, কারা দুঃসময়ে কাজ করেছে। অবশ্যই নির্বাচনের জন্য আত্মত্যাগ, ১৫ বছরের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা—এসব বিষয় বিবেচনায় আসবে।” সূত্র: বিবিসি