সিজিএস সংলাপে বক্তারা
রাজনৈতিক সংকট সমাধান করতে হবে রাজনৈতিক নেতাদেরই
ইউএনবি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হচ্ছে বিচার পাওয়া। আমরা এমন একটা সমাজ চাই যেখানে সময় মতো বিচার হবে।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘দুঃসময়ের কণ্ঠস্বরঃ তাঁদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটা ফ্যাসিস্ট সরকার একা কাজ করে না, সংবাদ মাধ্যম, প্রশাসন সঙ্গে নিয়ে কাজ করে। আমাদের সবার স্বপ্ন ভিন্ন নয়। সংস্কার করা সম্ভব। জনস্বার্থেই সংস্কার করা প্রয়োজন। আমার মতে, সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হচ্ছে বিচার পাওয়া। আমরা এমন একটা সমাজ চাই যেখানে সময় মতো বিচার হবে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা সমালোচনা করি তবে ফোকাস যেন নষ্ট না হয়। আমরা যেন সব কথা বলি, শুনি, বিবেচনা করি। সংস্কারের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বপ্নকে ধারণ করেই সংস্কার আসবে। ক্ষমতার ক্ষেত্রে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করি। ফ্যাসিজমের দোসররা সব জায়গায় আছে, বিভ্রান্ত না হয়ে আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চাই।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ভোগান্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার দুঃস্বপ্নের কথা কখনো বলিনি, এর পেছনে কারণ হলো, আমি সঠিক বিচার পাব না। আমার চেয়েও কষ্টের মধ্যে অনেকে গেছেন। আমি আমার স্বজনকে ফিরে পেয়েছি, কিন্তু অনেকে তাও পায়নি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিককের (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সব স্তরের, সবার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে। এই আন্দোলনের ফসল যেন আমাদের ঘরে ঢুকে এই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে, নাহলে প্রত্যাশা অপূর্ণ রয়ে যাবে। থেমে থাকা যাবে না। আমাদের সামনে অপূর্ব সুযোগ পরিবর্তন আনার। যদি বিভক্তির রাজনীতি করি অন্তর্ভুক্তির বদলে, টেনে নামানোর রাজনীতি থেকে বের না হই তবে সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষমতার ব্যবহার, অপব্যবহার উভয়ের পার্থক্য বুঝতে হবে। নৈতিকতাবোধের অভাব আমাদের যেই ক্ষমতাই থাকুক অপব্যবহার করতে বাধ্য থাকবে।’
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান বলেন, ‘বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবার মতো সরকার আমরা কখনোই পাইনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন সময়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছে যখন প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংক সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। উপদেষ্টাদের প্রয়োজন নিয়মিত রোডম্যাপ নির্ধারণ করা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আপনারা কেউ অধৈর্য হবেন না, সরকারকে সময় দিন একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করার।’ স্বচ্ছ উপায়ে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ বলেন, নাগরিক সমাজ নিয়ে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের জন্য। সমাজে চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত যারা সোচ্চার ছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানান এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির ভয়ে অনেকে চেষ্টা করেন না, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘মানুষ ভালো হতে হবে, ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আসতে হবে, তবেই সিস্টেমকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হবে। সামাজিক অবক্ষয় যখন হয়, সব জায়গাতেই হয়। এই সরকারকে সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি। সরকার নামানো, সরকার চালানো এক নয়। এই আন্দোলনকে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে মনে করেছে এই সরকার। আমরা সব স্তরের জনগণ এক সুতোয় গাঁথা ছিলাম। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ নেই। পলিথিন সরাতে এই সরকার আসেনি। রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করতে হবে এই সরকারের। বাংলাদেশের সবাইই সরকারের অংশীজন হতে চায়, এই বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’
জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের সব কয়টি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলেছেন। অনেকেই নির্যাতনের, নিষ্পেষণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সবসময় এক পক্ষকে তাল দিয়েছে। শুধু একটু সাহস দেখাবার প্রয়োজন ছিল, সত্য বলবার জন্য। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আরও বেশি পেশাদারিত্বের পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। সত্য কথা বলতে চাই আমরা। অপতথ্য, গুজবের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসবাস করেছি আমরা, সেখান থেকে বের হওয়া প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় ছিলেন- ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি; গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; সিনিয়র সাংবাদিক মো. মুক্তাদির রশীদ; জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য প্রীতম দাস; জোবান-এর সম্পাদক রেজাউল করিম রনি; বরখাস্ত হওয়া সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিম; রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষক ড. জাহেদ উর রহমান; সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল; ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সংগঠক মাইকেল চাকমা; আইপিনিউজ বিডির বিশেষ প্রতিবেদক উ মিমি মারমা মিমি; বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার; এএফপি বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরউদ্দিন শিশির; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা; বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াঁজো কমিটির সমন্বয়ক মামুন আবদুল্লাহ।