স্বর্ণা দাশের পরিবারের সাথে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী স্বর্ণা দাশের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রীতম দাশের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
পরিবারের সাথে সাক্ষাৎতের পরে স্বর্ণা দাশের বাবাকে সাথে নিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ব্রিফিং করেন নেতৃবৃন্দ। প্রতিনিধিদলে ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ঢাকা মহানগর নেতা এহসান আহমেদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংগঠক শাহেদ আহমেদ, চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
ব্রিফিংয়ে ফরিদুল হক বলেন, একটা নিরস্ত্র পরিবারের ওপর অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়ে এক কিশোরী মেয়েকে হত্যাকাণ্ডের পরে লাশও বিএসএফের সদস্যরা নিয়ে যায়। প্রায় দুদিন পরে লাশ ফেরত দেয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিজিবি 'পতাকা বৈঠক' করে তার লাশ ফেরত এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এদিকে ভারতের একটি মিডিয়ায় নিউজ করা হয়েছে, স্বর্ণা দাশকে নাকি বাংলাদেশি বিজিবি গুলি করে মেরেছে হিন্দু হওয়ার কারণে। সে এবং তার পরিবার নাকি রেজিম চেঞ্জ হওয়ার পর থেকেই সমস্যার মধ্যে ছিল এবং গত তিন সপ্তাহে নাকি তারা ৩ বার বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করে।
অথচ আমরা পরিস্কারভাবে জানি, সে তার মাকে নিয়ে ত্রিপুরায় থাকা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। তারপর সেসহ অন্তত ৩ জনকে গুলি করে বিএসএফ। বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে বিএসএফ এখন তাদের দেশের মিডিয়াকেও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন দিল্লীর প্রতি। বাংলাদেশের জনগণকে এই বিষয়ে আরও সরব হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি মিডিয়াগুলোতেও আরও নিউজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রীতম দাশ বলেন, ভারত কর্তৃক বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না করে প্রতিনিয়ত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর চালানো ধারাবাহিক জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের জানমাল রক্ষা করার কথা এদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর। কিন্তু প্রতিবার সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটার পরেই দেখা যায় বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলা রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিজিবি ইন্ডিয়ার সীমান্ত বাহিনীর হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করতে তাদের এদেশীয় শাখা বাহিনীর মতো ভূমিকা নেয়।
ভাতের রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশকে তাদের 'বন্ধুরাষ্ট্র' বলে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করে কিন্তু তাদের আচরণ বরাবর শত্রুদের মতো। বিগত ১৩-১৪ বছরে তারা সীমান্তে ৬০০ এর মতো বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে এবং নির্যাতন করে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের জনগণকে যদি সত্যিই ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা 'বন্ধু' মনে করতেন তাহলে এই দেশের ভূখণ্ডকে ৩ দিক দিয়ে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখতেন না। অন্যদিকে নেপাল-ভুটান তো নয়ই এমনকি ইন্ডিয়া চীন ও পাকিস্তান সীমান্তেও এইভাবে কাঁটাতার দিয়ে রাখেনি।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি আবারও স্মরণ করিয়ে দেন এবং অবিলম্বে চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্র-সরকারের কাছে দাবি জানান, অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। স্বর্ণা দাশের হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হোক।