সরকারের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না: মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪০ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাৎ করতে গিয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ছাত্র আন্দোলনে দিশেহারা সরকারের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে। এসব করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো অনেক অভিভাবক তার সন্তানের খোঁজ পাচ্ছে না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি গত ২৫ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে আসলেও তার অভিভাবকরা থানা, ডিবি অফিস, বিভিন্ন হাসপাতালে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে এলে মাসরুরের বাবা ও ভাইকে সেখান থেকে ডিবি তুলে নিয়ে যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে এখন জানতে চায় কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে চার/পাঁচ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে গণবিরোধী সরকার। আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র নেতাদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। আইনি ভিত্তি ছাড়াই হেফাজতের কাহিনী নজিরবিহীন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এভাবে অভিভাবক, তরুণ সমাজ এবং জনমনে ভীতি তৈরি করার নিষ্ফল চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সরকারের কূটকৌশল উপেক্ষা করে জনগণের সমর্থন নিয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিজেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্র লীগ, যুবলীগের ক্যাডার দিয়ে গণহত্যা, নৈরাজ্য চালিয়ে নির্লজ্জ সরকার লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মায়াকান্না করলেও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে যে অভূতপূর্ব লাল ডিজিটাল প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে, তাতে আপামর জনসাধারণের ঐক্য জানান দিয়েছে। জনসাধারণ খুনি সরকারের লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যায় সরকারকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেপ্তার-নির্যাতন করেছে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতেও সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোক আহত হন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আজ ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হামলা, গণহত্যা চালিয়ে গণ শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে নির্বিচার হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ। দিন যতই যাচ্ছে সরকারের অস্তিত্ব সংকট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্লজ্জ সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখুক না কেন, কোনো কিছুতেই ছাত্র-গণআন্দোলনে দিশেহারা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না।