রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আড়াল করতে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল হিসেবে বিএনপি, বিরোধীদল ও মতের নির্দোষ নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এই কথা জানান তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের আপামর শিক্ষার্থীদের যুক্তিসংগত আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধীদল ও মতের মানুষদেরকে এখনও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে (যিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন) সানিয়াতকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে গত রাত ১টায় বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মির্জা ফখরুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন যাবত বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের অব্যাহত গতিতে গ্রেপ্তারের অমানবিক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আড়াল করতে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল হিসেবে বিএনপির নির্দোষ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার কিংবা নেতা-কর্মীদেরকে বাসায় না পেয়ে তাদের সন্তান কিংবা বাসার সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অশালীন আচরণসহ বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। আন্দোলনে ভূমিকা রাখার মিথ্যা অভিযোগে ঢালাওভাবে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য দোষারোপ করছে। যদি তাই হয়, তাহলে তাদেরকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? এটাই জনগণের প্রশ্ন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে, বিএনপি কিংবা বিরোধী দলের কেউই আন্দোলনের সাথে জড়িত নয়। শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হতাহত করলো অথচ সরকারের ইশারায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি শুধুমাত্র ছয় জনের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করবে, যা সুকৌশলে পুরো হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ারই নামান্তর। তাই জনগণ পুরো ঘটনা ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করে। নইলে ব্যর্থতার সকল দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত বলে জনগণ মনে করে। কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও আনসার সদস্য যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নিহত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২ লাখ নগদ টাকা ৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে প্রদান করা হয়েছে। অথচ শত শত নিরীহ ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পাখির মতো গুলি করে গণহত্যা করা হলো যা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, যারা এই হত্যার সাথে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি।

একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে সানিয়াতের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।