২০২২ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ।
গত ১১ মে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এই এমপি খুনের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা হত্যার পেছনের কারণ খুঁজতে মাঠে কাজ করছে।
এদিকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা খুন হয়েছেন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে।
এরমধ্যে একজন রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে খুন হন জেলা পরিষদের সদস্য এবং নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম। আর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দিনে–দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক সুরজ মিয়াকে। জানা গেছে, এই তিনটি খুনের ঘটনাই ঘটেছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের দুজন সংসদ সদস্য খুন হয়েছেন। ২০১৬ সালে গাইবান্ধায় নিজ বাসায় খুন হন মঞ্জুরুল ইসলাম। আর সর্বশেষ কলকাতায় খুন হন এমপি আনার। এরমধ্যে মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খানসহ সাত আসামির ফাঁসির রায় দেন আদালত। আর এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তদন্ত চলছে। তবে এখনো হত্যার মোটিভ অজানা।
সূত্রে বলছে, আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই। আধিপত্য বিস্তার, দলীয় অন্তঃকোন্দল আর ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে। গত ছয় মাসে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪০ জন নেতা-কর্মী। আর ২০১৮ সাল থেকে গত মে পর্যন্ত ছয় বছরে ২০২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক অভ্যন্তরীণ সংঘাতে নিহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ২১০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষে ১ হাজার ৭৪৮ জন আহত হন। আর মারা যান ১৩ জন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।
তবে এসব সংঘর্ষে নিহতের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। তাদের বিপুল নেতা-কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। দলের মধ্যে কিছু আগাছা ঢুকে পড়েছে। বিভেদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে সাংগঠনিকভাবে দল ও আইনিভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানায় দলটি।