এমপি আনার হত্যা
ঝিনাইদহ জেলা আ.লীগের সম্পাদক মিন্টু আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১২:৪৬ এএম
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ( ১১ জুন) বিকেল চারটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে ধানমন্ডি থেকে আটক করে। এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আনারের মৃত্যু হিসেবে বেনিফিশিয়ারি হিসেবে দেখা হচ্ছে সাইদুল করিম মিন্টুকে। তাছাড়া আনারের মেয়ে মামলার বাদী মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনও মিন্টুকে সন্দেহভাজন হিসেবে ডিবিকে তথ্য দিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের এই নেতাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তে কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাইদুল করিম মিন্টুকে শুরু থেকেই আনার হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছেন আনারের পরিবার।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বিকেলে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে নজরদারিতে রয়েছেন ঝিনাইদহের কয়েকজন নেতা। এছাড়া আনারের হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা কার কার কাছে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সেখান থেকে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে কি না, কাদের মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হয়েছে— সব বিষয় তদন্ত হচ্ছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, কিলিং মিশনে যারা অংশ নিয়েছিল কলকাতা থেকে এমপি আনারের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে কার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না—সবকিছু বিষয় তদন্ত চলছে।
হারুন আরও বলেন, ‘সব তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে করেছি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন—এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনেছি। তাঁর রিমান্ড চলছে, তাঁকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনা ডিবি ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করছে। বাংলাদেশে অপহরণ মামলা হয়েছে; অন্যদিকে ভারতে হত্যা মামলা হয়েছে। দুই দেশের উদ্দেশ্য অভিন্ন।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আসামি ও ভারতে গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়াসহ অন্যরাও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করেছেন। হত্যাকাণ্ডটি ভারতে সংঘটিত হয়েছে এবং সব আসামি বাংলাদেশি। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় সব আসামি বাংলাদেশে চলে আসে।’
হত্যাকাণ্ডের পর দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, ‘এগুলো আমরাও শুনেছি, সবকিছু তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশ থেকে দিল্লির পর কাঠমান্ডু; এরপর দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তাকে আমরা ধরতে না পারলেও মোটামুটি বাকি সব আসামির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আসামিদের অনেককেই গ্রেপ্তার করেছি, ভারতে জিহাদ গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়া কাঠমান্ডু থেকে গ্রেপ্তার সিয়ামকে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাব।’
হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউ টাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামের একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ।