ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তবে তার মরদেহ উদ্ধার হয়নি। এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পরে তার নিহতের খবর ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলছে আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই সঙ্গে এ ঘটনার মূল কারণ উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
পরিবার বলছে, চিকিৎসার জন্য গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা দিয়ে গেদে বর্ডার হয়ে কলকাতায় যান আনোয়ারুল আজিম আনার। পরদিন ১৩ মে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ৫ দিন পর ১৯ মে ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে বাবার নিখোঁজের কথা জানান আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
এর আগে গত ১৮ মে আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ জানিয়ে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে আনারের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে জানান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশিরা জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল ধরবে না। কারণ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত নয়।’
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হতবাক হয়েছেন দলটির নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশিরা জড়িত। দেশের বাইরে গিয়ে একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হলো, এটা উদ্বেগজনক বটে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনা বেরিয়ে আসুক।’
আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। একজন সংসদ সদস্যের এইভাবে মারা যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। এটা আমরা সহজভাবে নিতে পারি না। কিন্তু কিছু করারও নেই।’
তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খোঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। আনার হত্যাকাণ্ডকে অস্বাভাবিক ও দুঃখজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। তিনি বলেন, ‘এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিস্তারিতটা জানার পরে, পূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেওয়া যাবে।’
আনোয়ারুল আজিম আনার ২০০৪ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারপোল থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি।
তাঁর নিহতের খবরে এসব অভিযোগের বিষয়গুলো আবার সামনে আসছে। তবে অভিযোগের বিষয়ে দলটির নেতারা কোনো কথা বলেননি।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে বিভিন্ন মামলা প্রসঙ্গে এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর ও খুলনার কিছু অংশ এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পরে সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। তা করতে সরকারকে অনেক সহযোগিতা করেছিল আনোয়ারুল আজিম আনার।’
২০০৯ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। টানা তিন মেয়াদে এমপি তিনি। গত বছর কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আনোয়ারুল আজিম।