Logo
Logo
×

রাজনীতি

ভার‌তে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এমপি আনার সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:৫৯ এএম

ভার‌তে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এমপি আনার সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবার ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ভারতে তার আরেকটি সংসার আছে বলে তারা জানতে পেরেছে। সেটা কেন্দ্র করেও কোনো জটিলতা হতে পারে।

তবে সূত্র বলছে, নানা কারণে প্রায় আলোচনায় থাকেন আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি। তাঁর বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান, অর্থ পাচার, হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় তাঁর নাম ছিল। আর দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন ও পেটানোয় বিশেষ পটু তিনি।

গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতাকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার অনেক অভিযোগও আনারের বিরুদ্ধে। তিনি কালীগঞ্জের কলেজে ঢুকে এক শিক্ষককে পিটিয়ে সারা দেশে সমালোচিত হয়েছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, আনার ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি কালীগঞ্জে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে শুরু করেন। এর আগে তার নামে অন্তত দুই ডজন মামলা ছিল। তবে ক্ষমতা পাওয়ার পর ধীরে ধীরে তিনি মামলার সংখ্যা কমিয়ে আনেন। পরে নির্বাচিত হন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হওয়ার পর পুরো কালীগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। 

ঝিনাইদহ এলাকায় মাদক চোরাচালান ও অর্থ পাচারের মধ্য দিয়ে বিপুল অর্থের মালিক বনে যান আনার। তিনি মূলত মহেশপুর এবং জীবননগর সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ, মাদক এবং অর্থ পাচার করেন বলে জানা গেছে। 

ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, ২০০৭ সালে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। সে সময় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গা-ঢাকা দেন আনোয়ারুল আজিম আনার। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অন্তত ২৫টি মামলা ছিল। এসব মামলায় তিনি ফেরারি আসামি ছিলেন।

তাকে গ্রেপ্তার করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন চুয়াডাঙ্গার বিশেষ আদালত। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান ও অর্থ পাচার সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে তার নাম ছিল ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায়। সে সময়ে একাধিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে আনারের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো কমে যেতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেশির ভাগ মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন আনার।

দলের নেতা-কর্মী খুন, নির্যাতনের অভিযোগ

২০২২ সালের নভেম্বরে যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলামকে কালীগঞ্জ শহরে নিজের বাসার নিচে কুপিয়ে হত্যা করে আনার এমপির ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। আরিফুল কালীগঞ্জের সাবেক এমপি মান্নানের অনুসারী ছিলেন। এ ঘটনায় এখনো আনার ও তার সহযোগীদের হুমকি-ধমকির মধ্যে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন আরিফুলের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা।

২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে পৌরসভা অডিটোরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হামলা চালায় আনারের সমর্থকরা। তারা ১১ জনকে কুপিয়ে আহত করে। হামলায় মারা যান কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দমোহন ঘোষ। সেই ঘটনার মামলায় পরিবারের পক্ষ থেকে আনার ও সহযোগীদের আসামি করার আবেদন করা হলেও প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে নিজেকে বাঁচান আনার। পরে তার সহযোগীদেরও মামলা থেকে বের করে আনেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আনোয়ারুল আজিম আনারকে কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন খান। আয়ুব নব্বইয়ের দশকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন ও দলের দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করেছেন। বর্তমানে তিনিও আনারের জুলুমের শিকার।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ ইকবাল শিপন মৃধাকে এক বৈঠকে আনোয়ারুল আজিম নিজেই মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে আজাদ ইকবাল শিপন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই শেখের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান একসময়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আনারের হাতে পুরোনো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রায় সবাই নির্যাতিত। তার ভাগনে বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আমাকেও মারধর করেছে।’

এছাড়া একাধিক দলীয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে পেটানো এবং হত্যার অভিযোগ আছে আনার এমপির বিরুদ্ধে।

শিক্ষক পিটিয়ে আলোচনায়

২০২২ বছরের মে মাসে এক কলেজশিক্ষককে পিটিয়ে আলোচনায় আসেন আনোয়ারুল আজিম আনার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঢুকে এক শিক্ষককে মারধর এবং আরেক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন আনার ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় সেদিনেই কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এমপি আনার গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে ওই শিক্ষকের কান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন