মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরকে ঘিরে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রটোকল দেওয়া হয়। এসময় তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন মার্কিন এ প্রতিনিধি। সে সময় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ইস্যুতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উচ্চারিত হয় তার নামটি। সংগত কারণে নির্বাচনের পর তার ঢাকায় আগমনকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়টি থাকবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। গুলশানের নিজ বাসায় নৈশ ভোজের পর এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন সালমান এফ রহমান।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার। তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় ডোনাল্ড লুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে।
তবে এসব বৈঠকের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে অনুষ্ঠাতব্য নৈশ ভোজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নামে নৈশ ভোজ হলেও মূলত নির্বাচন ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ওই বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সঙ্গে সফরের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেখানে ঢাকার পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তাও থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ডোনাল্ড লু আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। ওই বৈঠকে সবগুলো বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা হবে। ঢাকার সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন বাংলা আউটলুককে বলেন, নির্বাচনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। যদিও ভারতের চাপের কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি তবে ডোনাল্ড লু নির্বাচন যে ভালো হয়নি সেটি গুরুত্বসহকারে বলেছেন। এখন তার ঢাকা সফরেও সে সব বিষয় আলোচনায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আগামীকাল (বুধবার) পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলা সমীচীন হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এ কূটনীতিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা স্পষ্ট করেছেন। ওই চিঠির শুরুতে বাইডেন ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্ব’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন; যা থেকে স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগী। মূলত এখান থেকেই ঢাকা তার আলোচনার সূচনা করতে চায়।