রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১২ এপ্রিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আয়োজিত হয় ‘মার্চ ফর গাজা’। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অনেকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব বিশ্বের নীরবতার সমালোচনা করেন। এ সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যঙ্গচিত্র ও প্রতীকী জুতাপেটার ঘটনাও দেখা যায়।

এই প্রেক্ষাপটে, “ঢাকায় সৌদি যুবরাজের ছবি অবমাননা করায় সৌদি আরবে প্রায় ২০হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার” শিরোনামে প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ঢাকায় সৌদি যুবরাজের ছবি অবমাননা করায় সৌদি আরবে প্রায় ২০হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার” শিরোনামে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং, প্রথম আলোর ডিজাইন নকল করে এই ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এতে প্রথম আলোর লোগো রয়েছে এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে উল্লিখিত তারিখে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও সংশ্লিষ্ট দাবির বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।

ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ‘২০হাজার’ শব্দ দুটি একত্রে লেখা হয়েছে, যা বাংলা ভাষার শুদ্ধ নিয়মের পরিপন্থি। এমন ভুল সাধারণত প্রথম আলোর মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা যায় না। 

এছাড়া, ১৫ এপ্রিল প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত আরেকটি ফটোকার্ডের সঙ্গে এই ফটোকার্ডের ডিজাইনের মিল লক্ষ্য করা যায়। এসব থেকে প্রতীয়মান হয়, আলোচিত ফটোকার্ডটি বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে। 

তবে, গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবে এক সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তারের তথ্য উঠে আসে। আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশিদের অনুপাত স্পষ্ট করা হয়নি।

ইনডিপেনডেন্ট টিভির ওয়েবসাইটে ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি এপ্রিলের ৩ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত সৌদি আরবে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৮ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। 

মোট গ্রেপ্তারদের মধ্যে কোনো দেশের নাগরিকদের অনুপাতই স্পষ্ট করা হয়নি। তবে, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১ হাজার ৪৯৭ জনের মধ্যে ২৭ শতাংশ ইয়েমেনি, ৬৯ শতাংশ ইথিওপিয়ান এবং চার শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। একই সময়ে ৮ হাজারের বেশি প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে জানানো হয়।

অর্থাৎ, সৌদি আরবে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। একইসঙ্গে, সম্প্রতি বাংলাদেশে সৌদি যুবরাজকে অবমাননার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ বা গণগ্রেপ্তারের তথ্য বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, “ঢাকায় সৌদি যুবরাজের ছবি অবমাননা করায় সৌদি আরবে প্রায় ২০হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর নামে ইন্টারনেটে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।