বাংলাদেশ ঘিরে ভারতের এমন রেল নেটওয়ার্কের নেপথ্যে কী
ষাটের দশকে উপমহাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা ঘটে৷ তার মধ্যে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষপট ও মানচিত্র পরিবর্তনে ভুমিকা পালন করে । ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পরে ভারতের জন্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা এখনকার বাংলাদেশের উপর দিয়ে ব্রিটিশদের তৈরি করা রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার (২২জুন ২০২৪) দিল্লিতে যৌথবিবৃতি দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে কথাই মনে করিয়ে দেন, "গত ১০ বছরে আমরা ১৯৬৫ সালের পূর্বের সংযোগকে পুনস্থাপন করেছি।" তিনি বলেন, দু দেশের মধ্যকার সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংযোগ , বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা ।
বাংলাদেশ এবং ভারতের শীর্ষ বৈঠকের কয়েকদিন পূর্বে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৬ জুন এক সংবাদে বলছে, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি ১৯৮০-এর সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করতে চায়। আর এর বড় উদ্দেশ্য শিলিগুড়ি করিডোর যা "চিকেনস নেক" নামে পরিচিত তা বাইপাস করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৮৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪টি নতুন সংযোগ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করবে।
শনিবার মোদি আট মিনিটের বক্তব্যে বলেন, আখাউড়া-আগরতলার মাঝে এরই মধ্যে রেল সংযোগ শুরু হয়ে গেছে। খুলনার মোংলা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কার্গো সুবিধা শুরু করা হয়েছে। মোংলা বন্দরকে প্রথমবারের মতো রেল সংযোগ দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে। মোদি সরকার বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে সুসম্পর্কের কারণে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সেসব উল্লেখ করেন।
তিনি মনে করিয়ে দেন, দুই দেশের সম্পর্ক মুলত "প্রতিবেশীই প্রথম" নীতি, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় রূপরেখা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে যেসব দেশ রয়েছে, সেগুলোকে নিয়েই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। এর মধ্যে যেমন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে, তেমনি জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ রয়েছে।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস কৌশল ঘোষণা করে বাইডেন প্রশাসন। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক অবাধ, মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কথা ঘোষণা করেন। এই রূপরেখাকে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
চীন অভিযোগ করছে, আইপিএসের মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট আসলে সামরিকভাবে চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তো প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আই পি এস এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক "যথেষ্ট" খারাপ করবে।
আওয়ামী লীগ সরকার অবশ্য কৌশলগতভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে তার নিজস্ব আইপিএস বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুপরেখা ঘোষণা করেছে ২০২৩ সালে।
দিল্লিতে গতকাল যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশান্ত মহাসাগরীয় রূপরেখা নিয়ে কোন কথা বলেননি। তার বক্তৃতায় রেল যোগাযোগ নিয়ে তেমন তথ্যও নেই।
তবে তার ১০ মিনিটের চেয়ে কম বক্তৃতায় তিনি বলেন, রাজনীতি, বাণিজ্য, সংযোগ, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তাই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নতুন কোন রেল যোগাযোগ আদৌ হচ্ছে কিনা বা নতুন করে কী হচ্ছে এবং তাতে বাংলাদেশের আসলে কী লাভ হবে তা জানা যায়নি। দু দেশের মধ্যে যে সমস্ত বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায় গেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে আসা সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১-২২ জুনের এ সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ, বাংলাদেশ-ভারত গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, ভারতের ইন-স্পেস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, বাংলাদেশ ও ভারতের রেল মন্ত্রণালয়দ্বয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভারতের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধসংক্রান্ত সমঝোতা নবায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এবং বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন এবং মৎস্যম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়নসহ মোট দশটি সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পরে সাংবাদিকদের জানান, দু'দেশের মধ্যে সংযোগ বা কানেক্টিভিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর যাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও আমাদের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
কী জানা যাচ্ছে?
গত মে মাসের ২৯ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের কণ্ঠ জানায়, বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ট্রেন চালাতে চায় ভারত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার গেদে রেলওয়ে স্টেশন থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার ডালগাঁও রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। কিন্তু এই দুই স্টেশনের মাঝে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করতে চায় তারা। এতে ভারতের ট্রেন চালানোর সময় ও দূরুত্ব কমে আসবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে ঢুকতে চায় ভারতের ট্রেন। পরে ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথ ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেনটি আবার ভারতে প্রবেশ করবে—এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় রেল বোর্ডের এ প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে তুলে ধরেছে ভারতীয় হাইকমিশন।
‘বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন চালানোর প্রস্তাবের আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের ইন্টারচেঞ্জ (সীমান্তে ট্রেনের পরিচয় পরিবর্তনের জায়গা) ঘুরে দেখেছে ভারতের প্রতিনিধিদল।’
এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে ভারতের ট্রেনের প্রবেশ এবং চিলাহাটি দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চিলাহাটি দিতে বের হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী-জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ি-ফালাকাটা-হাসিমারা হয়ে ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাবে নদীয়ার গেদে থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন। এই রেললাইন ব্যবহার করতে পারলে ভারতের অন্তত ১০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে।
শনিবার (২২জুন) নয়াদিল্লিতে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ কী চায়?
বাংলাদেশ শুধু দুই দেশের মধ্যে রেলপথে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পাশাপাশি নেপাল- ভুটানকেও যুক্ত করতে চায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরিফুজ্জামান বাংলা আউটলুককে বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক একটা স্টাডি করছে কী করে বাংলাদেশের রেল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে নেপাল ও ভুটানকে সংযুক্ত করা যায়।
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল পরিচালনার ভারতের এমন প্রস্তাবের বিপরীতে গত ১৫ মে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে।
সভায় বলা হয়, বর্তমানে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আগের প্রস্তাবিত রুট বৃদ্ধি করে ভুটান সীমান্তের কাছে ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশন ডালগাঁও পর্যন্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে কয়েক দশক ধরে শিক্ষকতা করছেন ওবায়দুল হক। শেখ হাসিনার এ সফরও পর্যবেক্ষণ করছিলেন এ গবেষক। ছাত্রছাত্রীদের তিনি বাংলাদেশের ভেতরে আন্তরাষ্ট্রিক রেল সংযোগ নিয়ে পড়ান। তিনি সংক্ষেপে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পূর্বে উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রেল যোগাযোগের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডের ভেতর দিয়ে ভারতের রেলযোগাযোগ মূলত অকার্যকর হয়ে যায়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-ভারতের সে সকল সংযোগ পুনস্থাপন শুরু হয়েছে।
তিনি মনে করেন, যেসব জায়গায় সংযোগ পুনস্থাপিত হয়েছে মূলত ভারতের কাছে তা কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব রেল সংযোগ পুনঃস্হাপিত হয়েছে বা নতুন রেল সেতু করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে সংযোগ করেছে, তাতে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হয়েছে তা আমাদের জানার আগ্রহ রয়েছে।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এদের যোগাযোগের উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য "সিরিয়াস সিকিউরিটি ইম্প্লিকেশন্স" রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে যদি ভারতের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ হয় সে সময়ে এসব যোগাযোগ ব্যবহার করে ভারত কি চীনের মোকাবেলা করবে? সেই প্রশ্ন রয়ে যায়।
‘বাংলাদেশ কি তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে?,’ সেই প্রশ্নও তোলেন এ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
ওবায়দুল হক বলেন, ভয় হলো ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে রেল সংযোগ তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু জানি না। অতীতে আমরা পরিবর্তন দেখেছি, আমরা দেখেছি মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে পরিবর্তন হওয়া। এগুলো কেন হচ্ছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের থাকা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সরাসরি কিছু না জানলেও ভারতের পত্রপত্রিকায় দেখেছি, ভারত ১৪ টি লাইন নতুন করে যোগ করবে সেখানে ৮৬১ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপিত হবে।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সম্প্রতি বলেন, ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ১৯৬৫ সালের পূর্বের নৌ ও রেলপথ কে তাদের মত করে পুনঃস্থাপন করতে চায় মূলত চীনের শক্তিকে মাথায় রেখে৷ তিনি বলেন, সেকারণেই উত্তরাঞ্চলে নৌপথ ও নৌবন্দর কয়েক দশক পর চালু করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে কি তাহলে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ক্ষেত্র হচ্ছে?
এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সাবেক রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শহিদুল হককে। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবলমাত্র ভারত সফর শেষ করেছেন। সামনে তিনি চীন সফর করবেন। চীন থেকে কী ঘোষণা আসছে বোঝা যাবে সম্পর্কটা কোন দিকে যাচ্ছে। ভারতীয় পত্রিকায় রেলে নতুন সংযোগ দেখানোর পরে অনেক অবাক হচ্ছেন, আর আমি অবাক হচ্ছি তাদের অবাক হওয়া দেখে। গত ১৫ বছর ধরে করা হচ্ছে।
তিনি বলছিলেন, আমার মনে আছে ২০০৩ সালে ভারতে একটি থিংক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ ঘিরে সংযোগ একটি ম্যাপ প্রণয়ন করেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে হুবহু তা-ই বাস্তবায়ন হয়েছে। আপনি গত ১৫ বছরে যে সমস্ত যোগাযোগের অবকাঠামো হয়েছে তা খতিয়ে দেখুন। আপনার কি মনে হয় হলদিবাড়ি-চিলাহাটিতে বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে? সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু।
শহিদুল হক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে রিজনাল কানেক্টিভিটির পক্ষে। কিন্তু তাতে করে ঢাকা থেকে রেলে চেপে নেপালে বা ভুটানে যোগাযোগ সম্ভব। ঢাকার একজন কি সরাসরি দিল্লিতে যেতে পারছেন? আমাদের বাণিজ্যিক সুবিধাটা আসলে কোথায় এবং কিভাবে হয়েছে, তা জানা প্রয়োজন আছে।’
‘এখন খেয়াল করে দেখুন এই সমস্ত এই সংযোগ ভারতের আসলে কোন কোন সামরিক অবকাঠামোকে সংযুক্ত করছে। আমরা কী দেখতে পাচ্ছি?,’ বলেন তিনি।
১৯৬২ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট নিয়ে ব্যস্ত, তখনই ভারতের সাথে চীনের যুদ্ধ হয়। চলে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সংঘাত সৃষ্টি হলে ভারত সে সুযোগ কাজে লাগাতে চায় তার সীমান্তে। ভারতের কাছে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে তার নিরাপত্তা প্রশ্ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর বৃহত্তর গণতান্ত্রিক এ দেশ তার নিজের স্বার্থেই পছন্দের সরকারকে বাংলাদেশে সমর্থন যোগিয়েছে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
এ বিষযয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত শহিদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের রেল সংযোগে বড় ভয় হচ্ছে, এতে চীনের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে। কারণ ভারত মিলিটারি লজিস্টিক সাপ্লাই টা যেকোনো বিপৎকালীন সময়ে নিশ্চিত করতে চায়।
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি না ভারত-চীনের বিবাদের মধ্যে বাংলাদেশের পড়ে যাওয়া উচিত।’