Logo
Logo
×

অন্যান্য সংবাদ

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

পোশাক কারখানা এলাকার পানিতে ‘চিরস্থায়ী বিষ’

Icon

সারাহ জনসন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০১:০৪ পিএম

পোশাক কারখানা এলাকার পানিতে ‘চিরস্থায়ী বিষ’

সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য, বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে গার্মেন্টস বা টেক্সটটাইল ফ্যাক্টরি রয়েছে সেখানকার নদী, পুকুর ও কলের পানিতে বিপজ্জনকমাত্রায় বিষাক্ত ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ পাওয়া গেছে, যা মূলত বিষ, যা থেকে ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশে পরিচালিত এটি এ ধরনের প্রথম গবেষণা। গবেষণার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এসব এলাকার পানিতে পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্স (পিএফএএস) রয়েছে, যা ‘ফরএভার রাসায়নিক’ হিসেবে পরিচিত। ঢাকার বিভিন্ন টেক্সটাইল কারখানার কাছাকাছি ২৭টি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণা চালানো হয়েছে।

২০১৯ ও ২০২২ সালে নেওয়া নমুনায় পিএফএএস-স্তর ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্ধারিত নিয়ন্ত্রক সীমার অনেক বেশি এবং বেশ কয়েকটি নমুনায় এমন রাসায়নিকও মিলেছে যা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ—ইএসডিও এবং আইপিইএনের তথ্য অনুযায়ী। ইএসডিও হল একটি আন্তর্জাাতিক পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন)। আইপিইএন হল আন্তর্জাতিক দূষণ নির্মূল নেটওয়ার্ক (ইন্টারন্যাশনাল পলিউট্যান্টসও এলিমিনেশন নেটওয়ার্ক)।

ফরএভার কেমিক্যালস (চিরস্থায়ী রাসায়নিক) বা পিএফএএস

পিএফএএস হল প্রায় ১০ হাজার (১০,০০০) রাসায়নিকের একটি পরিবার যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটায়। এগুলি ১৯৫০ সালের দিক থেকে বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহৃত অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যগুলিতে যুক্ত হয়ে আসছে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ফরএভার বলার কারণ হচ্ছে এগুলি কোনো পণ্যে একবার ব্যবহারের পর তা ধ্বংস হতে কয়েকশ বছর এমনকি হাজার বছর সময় লাগতে পারে। যদি পিএফএএস পানিতে পড়ে তা কয়েকশ বছর ধরে সেখানে থাকতে পারে। 

পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ পিএফএএস ছড়াচ্ছে হয় তার অর্ধেকই (৫০ শতাংশ) টেক্সটাইল শিল্পের মাধ্যমে যাচ্ছে। 

ইএসডিও বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে গ্লোবাল ফ্যাশন হাব পরিচয়ে বিশিষ্ট বাংলাদেশ। টেক্সটাইল সেক্টর থেকে আসা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আমাদের বাসিন্দাদের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ফ্যাশনপণ্য থেকে আসা পিএফএএস আমাদের নদী, পুকুর ও পানির কলগুলিকে দূষিত করছে। এর জন্য মূল্য দিতে হবে।’ কে, কাকে, কেমন মূল্য দেবে—সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে কে।

স্টকহোম কনভেনশন

স্টকহোম কনভেনশনে পিএফএএস বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশও সেই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। ক্রমাগত জৈব দূষণ থেকে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা করা সেই চুক্তির লক্ষ্য।

পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনায় পিএফএএস উচ্চমাত্রায় পাওয়া গেছে টেক্সটাইল কারখানার কাছাকাছি এলাকায়। তার মানে টেক্সটাইল শিল্পটি পানিদূষণের প্রধান উত্স। ২০২২ সালে নমুনা সংগ্রহ করা হয় দুই ধরনের উৎস থেকে। উজান থেকে নেওয়া নমুনার তুলনায় ভাটির নমুনায় পিএফএএস উচ্চমাত্রায় দেখা গেছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সাভারের কর্ণতলি নদীর পানিতে যে-মাত্রায় পিএফএএস পাওয়া গেছে তা ইইউ-প্রস্তাবিত সীমার ৩০০ গুণেরও বেশি, নেদারল্যান্ডসে প্রস্তাবিত সীমার এক হাজার সাতশ (১৭০০) গুণ বেশি।

বাংলাদেশে পিএফএএসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনও এখানে তাকানোর সময় পায়নি। সময় যখন পাবে তখন আর কিছু করার থাকবে কিনা সেই প্রশ্ন এসে যাচ্ছে।

গবেষক দলের প্রধান শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ যার জনসংখ্যা বিশাল। জলাশয়গুলি সেচ, কৃষি, শিল্প উন্নয়ন ও পানীয় জলের প্রধান উত্স। আমরা দেখেছি যে, জল অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক দ্বারা দূষিত। একে একটি বড় সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করতে হবে, যার সমাধান দ্রুত প্রয়োজন।’

(দ্য গার্ডিয়ান ডটকম থেকে অনুবাদ)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন