Logo
Logo
×

অভিমত

মেঘনা আলম ইস্যুতে রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে

রাষ্ট্রচিন্তা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, উদ্যোক্তা ও মডেল মেঘনা আলমকে সম্প্রতি একটি বিতর্কিত ও ‘কালো আইন’-এর আওতায় ৩০ দিনের জন্য আটক করা হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতিকে ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি—যারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন—রাতের আঁধারে তাঁর বাসায় প্রবেশ করেন, প্রথমে পরিচয় গোপন রেখে পরে মাদকের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ, থানা ও গোয়েন্দা বাহিনীর মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসে। থানা জানায় তারা কিছু জানে না, ডিবি বলে তারা কিছু করেনি, আর পরে ডিবিই তাঁকে আটক করার কথা স্বীকার করে। এই ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ ধাঁচের নাগরিক অধিকার হরণ আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অভাবকে স্পষ্ট করে।

মেঘনা আলমকে যেই আইনে আটক করা হয়েছে, সেটি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন—বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত ও কলঙ্কিত আইন। এই আইনটি দীর্ঘদিন ধরে অপব্যবহারের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বিতাড়িত স্বৈরাচার সরকার ঠিক এই আইনকে হাতিয়ার করেই গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আজও দেশে একটি "আইনানুগ গুমের কাঠামো" বিদ্যমান, যার মাধ্যমে মানুষকে নিখোঁজ করে এই আইনের মারপ্যাঁচে কারাবন্দি করা হয়। এটি শুধু বেআইনি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় বর্বরতা ও নৈতিক অধঃপতনের প্রতিচ্ছবি।

এই কালো আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের সমালোচকদের দমন করা। একে গণতন্ত্রের ছায়ায় স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার ‘আইনি প্যাকেজ’ বলাই যথাযথ। আজ যখন আমরা নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি—গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় জানিয়েছি—তখন এই আইন টিকে থাকা কেবল নৈতিক ও আইনি বিভ্রান্তি নয়, বরং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মবিরোধিতার প্রতিচ্ছবি।

রাষ্ট্রচিন্তা আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, এই ঘটনার পেছনে একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ক্ষোভের অভিযোগও উঠেছে। যদি সত্যি হয়, তবে এটি কেবল অনভিপ্রেত নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর এক ধরনের কূটনৈতিক আগ্রাসন। রাষ্ট্র যদি এতে নীরব থাকে, তবে তা আত্মঘাতী বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

রাষ্ট্রচিন্তা’র দাবি:

১. মেঘনা আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যদি তাঁর বিরুদ্ধে প্রকৃত কোনো অভিযোগ থাকে, তবে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের আওতায় স্বচ্ছ তদন্ত ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হবে। এই আইন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

৩. ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব বাহিনী ও ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না।

৪. অভিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রমাণিত হলে তাঁর কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

রাষ্ট্রচিন্তা বিশ্বাস করে, একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা তখনই রক্ষা পায়, যখন সে তার দুর্বলতম নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার কেবল একটি আইনগত ব্যত্যয় নয়, বরং এটি একটি গভীর নৈতিক ব্যর্থতা, যার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন