Logo
Logo
×

অভিমত

৭১ আমাদের নতুন মানচিত্রের ফয়সালা; ২৪ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াবার উপলক্ষ

Icon

ফারহান আরিফ

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ পিএম

৭১ আমাদের নতুন মানচিত্রের ফয়সালা; ২৪ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াবার উপলক্ষ

৭১ আর ২৪ কে একাকার করে যারা দেখায় বা দেখানোর চেষ্টা করে, এরা মূলত: তাদের অতীত গ্লানি ভুলে যাওয়া ও ভুলিয়ে দেয়ার তাড়না থেকেই এটা করে। এরা একাত্তরে অংশগ্রহণ করেনি; বরং এদের পূর্বপুরুষরা একাত্তরে বিপরীত ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও এরা এর কোনো সমাধানে আসেনি। দিনের পর দিন একাত্তর এদের মনোজগতে একটা ভয়ংকর ট্রমা হিসেবেই থেকে গিয়েছে। 

স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়ার পর এদের সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের ভুলত্রুটি স্বীকার করে পুনর্বাসিত হবার। কিন্তু একাত্তর ওদেরকে যে পরাজয়ের গ্লানি দিয়েছে সেটাকে তারা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। বরং এই পরাজয় তাদের মাঝে একটা ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সিটি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে এদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ঐ হীনমন্যতারই বহি:প্রকাশ। 

এটা সত্য যে, হাসিনার পনেরো বছর একাত্তরকে নানাভাবে বিতর্কিত করেছে। তবে সেটা একাত্তরের চেতনা থেকে নয়; বরং একাত্তরকে আওয়ামী মোড়কে দখলের চেতনার ফলে হয়েছে। একাত্তরকে মুজিবের ব্যক্তিগত অর্জন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় ন্যারেটিভে ফেলে বিবৃত করার কারণে নতুন প্রজন্মের মাঝে কিছু ভুল ও বিতৃষ্ণা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সেটাই প্রজন্মের প্রকৃত আন্ডারস্ট্যান্ডিং নয়।

চব্বিশে আওয়ামী লীগের পতনের পর আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে একাত্তরের প্রকৃত ইতিহাসকে নির্মোহভাবে পাঠ করার। সচেতন নাগরিক মাত্র সেটা করছেনও। কিন্তু এই নির্বোধ ও ঘাড়ত্যাড়া গোষ্ঠীটি এটি মানতে নারাজ। তারা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরতে পারেনি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর এটিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা কিংবা স্বাধীনতা ২.০ হিসেবে বিবৃত করা এই উল্টোপন্থী গোষ্ঠীটিরই ন্যারেটিভ। ইতিহাস সচেতন বাংলাদেশিরা এদের এই সূক্ষ্ম কৌশলটি খুব দ্রুতই বুঝে ফেলেছে। 

এই নির্বোধরা বুঝে না যে, একাত্তর ছিল একটি ভিনদেশি আগ্রাসী শক্তির কবল থেকে মুক্তির সংগ্রাম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের অস্তিত্ব পেয়েছি। একটি নতুন মানচিত্র পেয়েছি। একাত্তর আমাদের জাতিসত্তার প্রতীক। আর চব্বিশ আমাদের দিয়েছে একটি স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ। চব্বিশ এমন একটি অধ্যায়, যেখানে লিপিবদ্ধ থাকবে কীভাবে বিপন্ন গণতন্ত্র উদ্ধারে এদেশের ছাত্রজনতা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। 

একাত্তর আমাদের অস্তিত্ব, আর চব্বিশ আমাদের প্রেরণা। এই দেশের মাটিতে চব্বিশের আগে পঁচাত্তর ঘটেছে, নব্বই ঘটেছে। আমাদের প্রজন্ম আগের দুইটি ঘটনা দেখেনি, তাই হয়তো সেগুলোর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারছে না। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে সমান্তরালে রাখতে হবে। তবে একাত্তরকে জায়গা দিতে হবে সকলের ঊর্ধ্বে। একাত্তর না হলে এই ঘটনাগুলোই ঘটতো না- এটাই চূড়ান্ত বাস্তবতা। তাই যারা মাঝখানের লম্বা ইতিহাসকে বাদ দিয়ে কেবলই চব্বিশের সাথে একাত্তরকে সমান্তরালে দাঁড় করাতে চাইবে- তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। কারণ এই শক্তি চব্বিশ দিয়ে তাদের একাত্তরের গ্লানিকে আড়াল করতে চাইছে, আগামীতেও চাইবে। 

শেষকথা: ৭১ আমাদের নতুন মানচিত্রের ফয়সালা; ২৪ আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার উপলক্ষ। চব্বিশ হচ্ছে একাত্তরের চেতনা থেকে উদ্ভূত বাংলাদেশের আপামর জনতার মানসপটে থাকা নাগরিক স্বাধীনতার প্রতিফলন।

ফারহান আরিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন