Logo
Logo
×

অভিমত

নাহিদের পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতির ভিন্ন দৃশ্য

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম

নাহিদের পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতির ভিন্ন দৃশ্য

জানি, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নাহিদদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সেটা নাহিদও জানেন। নিদেনপক্ষে আরও এক থেকে দেড় বছর তিনি মন্ত্রী মর্যাদায় উপদেষ্টার পদে থাকতে পারতেন। কিন্তু সে পদত্যাগ করে ফিরে গেছেন ছাত্র-জনতার কাতারে। এটাই নতুন বাংলাদেশ। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নাহিদ। স্যালুট তাকে। 

জানি সংশয়বাদীদের অনেকে বলবেন, তিনি আগামীতে পূর্ণ ক্ষমতায় যাবার জন্য পদত্যাগ করেছেন। যারা বলেন, তারাও জানেন, তারা মিথ্যা বলছেন। তবু তাদের মনের সংশয় একথা বলতে তাদের বাধ্য করছে। আর এ সংশয় এসেছে তাদের নিজ চরিত্র থেকে। যারা একদিনের জন্যও মন্ত্রীর পদ পেতে ভিনদেশি রাষ্ট্রদূতের পা চাটতেও দ্বিধা করেন না, তাদের মধ্যে এ সংশয়টা থাকবেই। যারা মনে করেন, একদিনের জন্যও মন্ত্রীর সিলমোহর লেগে গেলে চৌদ্দগুষ্টি এই সিলমোহরের সুফল ভোগ করবে, তাদের মধ্যে নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে সংশয় থাকবেই। 

বাংলাদেশে এর আগে মাত্র একটি দৃষ্টান্ত ছিল নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগের। সেটাও আশির দশকের ঘটনা। তারপরের সব ইতিহাস। পদ পেতে এমন কোনো প্রচেষ্টা নেই যা বাংলাদেশের পদপ্রত্যাশীরা করেননি। কিছুর সাক্ষী আমি নিজেও। আর বর্তমান সময় তো পদে যাবার আকুলতার বিষয়টি সবাই প্রত্যক্ষ করছেন। ক্ষমতায় যেতে কতটা নির্লজ্জ হতে হয়, তার অনুশীলন আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। যারা বাংলাদেশের মানুষকে বোকা ভাবেন। ভাবেন, তারা কিছুই বুঝতে পারছে না, তারাও আওয়ামী লীগের মতন ইউটোপিয়ান। বাস করছেন অলীক রাজ্যে, ইউটোপিয়ায়। 

সেই অলীক রাজ্যের প্রতি নাহিদের পদত্যাগ একটি আঘাত। পদত্যাগ পত্রে নাহিদ লিখেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার কাতারে ফিরে যাওয়াটাকে তিনি উপদেষ্টা পদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এটাই রাজনীতি, মানুষের পাশে থাকাটাই রাজনীতি। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ক্ষমতায় ছিল না, কিন্তু মানুষের পাশে ছিল। মানুষও তাদের সাথে ছিল, সাথী হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা যতই বিএনপির কাছে চলে আসছে, মানুষের সাথে তাদের ততই একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। জানি না, বিএনপির নেতৃবৃন্দ তা বুঝতে পারছেন কিনা। বিএনপির সুপ্রিমো তারেক রহমান হয়তো বুঝতে পারছেন। তাই তার কথায় প্রতিনিয়তই নেতা-কর্মীদের প্রতি মানুষের কাছে থাকার আহ্বান ধ্বনিত হচ্ছে। তিনি বলছেন, বিএনপি যত বড় দলই হোক না কেন, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিলে, তার মাশুল দিতে হবে। 

আওয়ামী লীগ যত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে ততই জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। শেষ পর্যন্ত বাহিনী নির্ভর আমলাতান্ত্রিক একটি দলে পরিণত হয়েছিল একসময়ের প্রধান দলটি। আজ সে দল পরিত্যাজ্য। মানুষ তাদের ফ্যাসিস্ট বিশেষণে বিশেষায়িত করেছে। অনেকে হয়তো চিন্তা করছেন আওয়ামী লীগ দ্রুতই বাংলাদেশে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে। তাদের বলি, ‘দিল্লি দূর অস্ত’। কোনো হিসেব-নিকেশেই আওয়ামী লীগের দ্রুত পুনর্বাসন সম্ভব নয়। 

কথা উঠেছে দিল্লি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে সহায়তা করবে। যারা জিও-পলিটিক্স বোঝেন তারা, জানেন মৃত ঘোড়া যুদ্ধের ময়দানে কত অপ্রয়োজনীয়। আওয়ামী লীগ এখন দিল্লি দর কষাকষির কাজে লাগবে, এর বেশি কিছু নয়। কারণ সাউথ ব্লক জানে, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে সহায়তা করলে, পুরো বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে। জিও-পলিটিক্সের ক্ষেত্রে কোনো দেশ কখনো জনগণের বিপক্ষে একটি দলের পক্ষ নেবে না। বরং তারা চেষ্টা করবে বিকল্প খুঁজতে। যার ফলেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘ভারতের ভরসা বিএনপি’। আর কথা বাড়াই না। আক্কেল মান্দ কা লিয়ে ইশারা কাফি। 

যাকগে ফিরি আবার নাহিদের পদত্যাগে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নতুন কোনো দলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাস্তবতা বলে নতুন কোনো দলের ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, নির্বাচনে ভালো করাও সম্ভব নয়। ৫ আগস্ট যেমন বাংলাদেশের জন্য ছিল মিরাকল, তেমন কোনো মিরাকল না ঘটলে নতুন কোনো দলের ক্ষমতায় আসা প্রায় অসম্ভব। ৫ আগস্টকে কেন মিরাকল বলছি, ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিশ্বাস করেননি আওয়ামী লীগের পতন ঘটতে যাচ্ছে। 

কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন আমরাও সংশয়ে ছিলাম, এটা সরকারেরই আরেকটা চাল কিনা। কারণ আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক শিক্ষার্থীরই আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। কিন্তু যখন আন্দোলন ধীরে ধীরে একটা পূর্ণ রূপ পেতে শুরু করলো, তখন বুঝতে পারলাম এই শিক্ষার্থীরা নিজেদের জান বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছে। যাদের কোনো ক্ষমতার লোভ নেই, ক্ষমতায় যাবার সম্ভাবনাও নেই, তারা যখন রাস্তায় জীবন দিচ্ছে, এই ত্যাগ বৃথা যাবার নয়। আমরা যারা বোঝার বুঝে নিয়েছিলাম। বোঝেননি কিছু রাজনীতিক, যারা তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে গর্ব করতেন, এখনো করেন। তাদের অভিজ্ঞতায় নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের বিষয়টিই ছিল না, তাই তারা তরুণ-যুবাদের কমিটমেন্ট আর ডেডিকেশনের বিষয়টি বুঝতে পারেননি। আর সে কারণেই ৫ আগস্টের দুপুর পর্যন্ত তাদের বোঝা সম্ভব হয়নি, ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন ঘটতে যাচ্ছে। 

নাহিদের পদত্যাগের সারমর্ম তারা সে কারণেই বুঝতে পারবেন না। যখন বুঝবেন তখন জনগণ হয়তো তাদের ভুলে যাবে। তারেক রহমান বলেছেন না, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিলে কিছুই করার থাকবে না। 

ফুটনোট : সেনা প্রধান বলেছেন, ‘সতর্ক করছি, নিজেদের মধ্যে হানাহানি বন্ধ না করলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।’ বর্তমান বাস্তবতায়, কথাটা মাথায় রাখা উচিত।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন