Logo
Logo
×

অভিমত

সংস্কারের মূল্য

Icon

তারেক খান

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম

সংস্কারের মূল্য

বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল ও পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, যেখানে সময়ের সাথে সাথে নানা রকম পরিবর্তন ঘটছে। সেই একাত্তর থেকে। প্রতিনিয়ত। বর্তমান সময়ে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে যে অস্থিরতা চলছে, তা থেকে মুক্তি পেতে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সংস্কার অপরিহার্য। অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে—এখন কি সময় সংস্কারের, নাকি নির্বাচন আগে?

মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছে। তারা জানে, নির্বাচন ছাড়া অর্থনীতির গতি ফিরবে না। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচন ও অন্যান্য প্রয়োজনে সংস্কার জরুরি। সংস্কার না হলে বিপদ। এই সংস্কার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। সময় দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই সময়ের জন্য কী ক্ষতি মেনে নিতে হবে?

সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে যদি আরো এক বছর সময় লাগে, এই সময়ের মধ্যে অর্থনীতির আরো ক্ষতি হবে। ইতোমধ্যেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি এক বছরে ৮.৩৭ শতাংশ থেকে নেমে ৩.৫১ শতাংশ হয়েছে (বিবিএস প্রতিবেদন)। আগামী এক বছরে তা আরো কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেই চিন্তা করাই কঠিন। তবু সংস্কার হতে হবে। তড়িঘড়ি নির্বাচনের সুযোগ নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। তবে জনগণের মনে একটি সংশয় বিরাজ করছে। তারা জানে, অতীতে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। তাই এইবার তারা একটি সৎ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা করছে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু সরকারের সামর্থ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

চব্বিশের গণঅভুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা নেই। এই অভুত্থানের ফলে মানুষের মধ্যে বিপুল নতুন আশা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, তাদের কথা শোনা হবে এবং তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। এই অভুত্থান দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করেছে। মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। এখন মানুষ জানে, তাদের ভোটের মূল্য আছে। তারা তাদের ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে পারে।

প্রশ্ন হলো, সংস্কার করতে সময় লাগবে, কিন্তু জনগণের প্রতীক্ষা কতদিন? যদি নির্বাচনে দেরি হয়, তাহলে কি জনগণ এই দেরি মেনে নেবে? মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ওদিকে বিএনপি মাঠে নামল নির্বাচনের দাবিতে। তারা চাইছে দ্রুত নির্বাচন, কিন্তু তারা জানে যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার জরুরি এবং নির্বাচনের পরে সংস্কার জরুরি। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে সরকারকে সঠিক পথ বেছে নিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে এর ফল হবে অপ্রত্যাশিত। অতীতে দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। তাই সরকারের উচিত হবে জনগণের স্বার্থে সংস্কার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে সরকারকে তাদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।

সরকারের সংস্কার কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যদি এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাহলে তারা তাদের দাবি তুলে ধরতে পারবে এবং সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা জানাতে সক্ষম হবে। এটি সরকারের জন্য একটি সুযোগ, যাতে তারা জনগণের মনোভাব বুঝতে পারে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতাও জরুরি। কিন্তু তাদের মধ্যে যথেষ্ট বিরোধ দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের সময় নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি একত্রিত হয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে তারা জনগণের স্বার্থে একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করতে সক্ষম হবে। এই সমঝোতা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে স্থিতিশীল করবে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে।

এখন জনগণের মধ্যে যে আশা রয়েছে, তা যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে, যা দেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে এবং জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে।

নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতি একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে জন্য জনগণের আশা, সুষ্ঠু সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন