Logo
Logo
×

অভিমত

সেনাবাহিনীকে আগামি দিনে হিমশিম খেতে হবে

Icon

ফরহাদ মজহার

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৪ পিএম

সেনাবাহিনীকে আগামি দিনে হিমশিম খেতে হবে

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেখা করেছেন। হয়তো তা নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কিন্তু তার ইতিবাচক তাৎপর্য রয়েছে। 

উপদেষ্টা সরকারের রাজনৈতিক এবং আইনী বৈধতার অভাব গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বৈরি ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সম্প্রতি ছাত্র-তরুণরা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাজধানিতে সভা করে পাঠ করতে চেয়েছে। সেটা তারা করতে পারে নি, কিম্বা করতে দেওয়া হয় নি। উপদেষ্টা সরকারের মধ্যে তা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রস্তাবিত ঘোষণার সরাসরি বিরোধিতা করেন (দেখুন, ‘ছাত্রদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা পেছানোর নেপথ্যে’), এতে পরিষ্কার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে দুটো পরস্পর বিরোধী ধারা গড়ে উঠেছে এবং তাদের পার্থক্য ও বিরোধ আগামিতে আরও তীব্র এবং ব্যাপ্ত হবে। যে প্রতিবিপ্লবী শক্তি আইন ও সংবিধানের দোহাই তুলে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছে এবং আইন ও রাজনীতি উভয় দিক থেকে একটা সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার কায়েম করেছে আগামিতে এই গণবিরোধী প্রতি বিপ্লবী ধারাকে আরও পরিষ্কার চেনা যাবে। 

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দায়িত্ব পালনের দিক থেকে সেনাবাহিনীকে আগামি দিনে হিমশিম খেতে হবে। বলাবাহুল্য জনগণ অবশ্যই সেনাবাহিনীকে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এই গৌরবজনক অবস্থানেই দেখতে চাইবে। সেনাবাহিনী এই গৌরব ধরে রাখবে -- আমরা সাধারণ জনগণ সেটাই আশা করি। তিন অগাস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী প্রমাণ করেছে সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষের শক্তি, প্রতিবিপ্লবী শক্তি নয়। 

রাজনীতির এই বাস্তব মেরুকরণ এবং আগামি দিনে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ বিচার করলে সেনা প্রধানের এই সৌজন্য সাক্ষাৎকার জনগণ খুবই ইতিবাচক ভাবে দেখছে। আমি অতি সাধারণ মানুষ নিয়ে কারবার করি। সাধারণ মানুষের উপলব্ধিটুকু ব্যাক্ত করলাম। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তিনি চান বা না চান –অর্থাৎ সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁকে জনগণ পাক বা না পাক – বেগম জিয়ার প্রতীকী তাৎপর্য আগামি রাজনীতিকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করতে পারে। এর আগে আমি বলেছি তাঁর আপোষহীনতা – অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট শক্তি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন না করা – তাঁকে এক ঐতিহাসিক মর্যাদা দিয়েছে তা আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনগণের স্মৃতিতে আর ম্লান হবার নয় (কমেন্টে দেখুন)। এই দিক থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকার নিছকই সৌজন্য হলেও তার ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা পরিষ্কার। সেটা হচ্ছে ঐক্য এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবেশ তৈরির আন্তরিক প্রয়াস। এই সাক্ষাৎকার খুবই সময়োপযোগী হয়েছে। 

বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ফল কি দাঁড়াবে সেটা নির্ভর করবে মোটাদাগে রাজনীতির তিন ত্রিভূজ পক্ষের মধ্যে সমঝোতা কিম্বা বিরোধের মাত্রা দ্বারা। এই তিন পক্ষ কারা?

এক. গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার শক্তি এবং গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ের রূপ কি হতে পারে সেটা তারা কতোটা  জনগণকে সঠিক ভাবে বুঝিয়ে বলতে ও ব্যাখ্যা করতে পারছে তার ওপর। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ‘ঘোষণা’ কিম্বা ‘ইশতেহার’ এই দিক থেকে বাংলাদেশের আগামি রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর আগের  খসড়া বাজারে চাউর হয়ে  যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে শিক্ষ নিতে হবে। এর প্রণয়ণ ওপর থেকে চাপিয়ে নয়, গণতান্ত্রি প্রক্রিয়ায়া হওয়াই বাঞ্ছনীয়। ছাত্র-তরুণদের আবেগ তাড়িত হয়ে চললে তারা ব্যর্থ হবে। দরকার ইতিহাস, রাজনৈতিক মতাদর্শিক তর্ক মীমাংসা এবং পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের যুগে নিউ লিবারাল ইকনমিক পলিসি এবং তথাকথিত লিবারেল রাজনৈতিক মতাদর্শ মোকাবিলার শক্তি অর্জন। কি সম্ভব আর কি সম্ভব নয় সেটা সকলকেই বুঝতে হবে । ছাত্র-তরুণদের প্রমাণ করতে হবে তারা সমাজের দায়িত্বশীল ও গাঠনিক শক্তি। 

দুই. বিএনপি এবং তার জোট ও সমর্থক। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিশাবে খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি সকল পক্ষকে আন্তরিক ভাবে স্বকার এব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা বহু জটিল সমস্যার সমাধান সহজে করতে পারি।  

তিন. সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি এবং রাষ্ট্র সুরক্ষার প্রচলিত আদর্শ ও ভূমিকা জাতীয় রাজনীতিতে সদাসর্বদা প্রকাশ্যে কিম্বা অপ্রকাশ্যে ছায়া ফেলে। ৩ অগাস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। আগামিতে যেন তারা এই গুরু দাতিত্ব পালন করে সে ব্যাপারে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। 

বলাবাহুল্য এই ত্রিভূজের বাইরেও জমায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য ইসলামি দল রয়েছে। তবে ইসলামপন্থি দলগুলো জাতীয় রাজনীতির নির্ধারক বয়ান নির্মানে এখনও পিছিয়ে রয়েছে। ছাত্র-তরুণদের রজনীতি সেকুলার বনাম ধর্মীয় মতাদর্শের বাইনারি ভেঙে নতুন রাজনৈতিক বয়ান তৈরির শর্ত হাজির করেছে। তারা এই নতুন রাজনৈতিক পরিসর গড়ে ওঠায় উপকৃত। তারা নিজেদের স্বার্থেই ছাত্র তরুণদের অনুসরণ করবে। তাই বলা যায় মোটা দাগে এই তিন পক্ষের সমঝোতা কিম্বা বিরোধ আগামি দিনের রাজনীতির গতিপথ নির্ণয় করবে। [লেখাটি ফরহাদ মজহারের ফেসবুক আেইডি থেকে সংগৃহীত]

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন